প্রসেনজিৎ বিশ্বাস


হিন্দু ধর্মে জগন্নাথ রথযাত্রার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এবং এটি রথ মহোৎসব নামেও পরিচিত।মঙ্গলবার সকাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা পালিত হয়। ভারতের পুরীতে জগন্নাথের এই রথযাত্রা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় উত্‍সব। জগন্নাথ মন্দিরের যেমন ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, তেমন বিজ্ঞানের দিক থেকেও নানা রহস্য রয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের।

আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথীতে জগন্নাথদেব তার মুল মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দিরে যে যাত্রা করেন, তা-ই রথযাত্রানামে অভিহিত।

সাধারণত ভক্ত ভগবানকে দর্শন করার জন্য মন্দিরে যান। কিন্তু যারা কখনো মন্দিরে গিয়ে ভগবানকে দর্শন করতে পারেন না। তাদের দর্শন পানের মাধ্যমে কৃপা করার জন্য দুবাহু প্রসারিত করে তিনি রাজপথে যাত্রী- করেন। যেন তিনি প্রেমভার তার ভক্তকে আলিঙ্গন করতে চান এটাই করুণাঘন জগন্নাথদেবের শুভ মহিমান্বিত রথযাত্রা।

একসময় সূর্যগ্রহণ কালে ব্রজবাসীরা পূণ্য স্নান করার নিমিত্তে কুরুক্ষেত্রে যান। ভগবান শ্রীকৃষ্ণও তখন বলরাম ও সুভদ্রা সহ রথে করে সেখানে যান। ব্রজবাসীরা দীর্ঘ বিরহের পর ভগবানকে কাছে পেয়ে প্রেমাপ্লুত হন । তখন তারা তার রথ টেনে কুরুক্ষেত্র থেকে বৃন্দাবনের দিকে নিয়ে যান। সেই লীলা স্মরনে ব্রজবাসীদের ভাব অনুসরনে বৈষ্ণবগণ জগন্নাথদেবের রথাযাত্রা উদযাপন করে থাকেন ।

জগন্নাথদেবের রথযাত্রা সার্বজনীন-বিশ্বজনীন বিশ্ব-ভ্রাতৃত্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। জগন্নাথদেবের রথযাত্রা এক সময় ভারতের উড়িষ্যা প্রদেশের পুরীতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ ইহা ভারত পেরিয়ে ইউরোপ আফ্রিকা ছাড়িয়ে পড়েছে। দিগ্বিজয়ের পাল্লায় প্রশান্ত মহাসাগরের অস্ট্রেলিয়াকেও আলিঙ্গন করেছেন স্বমহিমায়।

ছোট্ট ভূখণ্ড বাংলাদেশ নামক দেশটির বাসিন্দা আমরা এ পাল্লায়" আমরাও গর্বিত - বিশ্বায়নে রথযাত্রায় আমর তয় স্থান দখল করে মাথা নিচু করে শ্রদ্ধানিবেদন করি শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং তার সঙ্গে থাকেন ভাতা বলদেব ও ভগিনী সুভদ্রা এবং সেবক সুদর্শন দেবকে।

এই রথযাত্রী আমাদের সেতুবন্ধন তৈরী করে মহামিলনের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা বেমালুম ভুলে গেছি সকল ভেদাভেদ-সামিল হয়েছি জাতি-বর্ণ-গোত্রের সকল অস্পৃশ্যতাকে দুর করে সমাজের সকাম শ্রেণীর মানুষ একযোগে ভগবানের কৃপায়া-করুণায়-মহিমায় - ধন্য এ শুভ রথযাত্রার দিনটিতে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।