মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের আকবরপুরের সৌখিন খামারি নাদিম খান আকবরপুরের কিং নামে প্রায় ১৩ মণ ওজনের আমেরিকার ব্রাহমা প্রজাতির বিশাল দেহের গরু নিয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভা আয়োজিত কোরবানির পশুর হাটে উপস্থিত হয়েছেন। এরই মধ্যে গরুটিকে ঘিরে ওই হাটের দর্শনার্থীদেরও নজর ছিলো লক্ষণীয়। কেউ সেলফি আবার কেউ ভিডিও কন্টেন্ট বানানোর জন্য মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি ধারণে ব্যস্ত। এতে অবশ্য প্রচার বাড়বে এবং দ্রুত সময়ে ভাল দামে গরুটি বিক্রি হবে এমন আশায় খুশি গরুটি বিক্রির দ্বায়িত্বে থাকা লোকজনও। দর্শনার্থীদের দৃষ্টিকাড়া আকবরপুরের কিং নামে ওই গরুটির দাম হাঁকাচ্ছেন ৪ লক্ষ টাকা। এমন বিশাল সাইজের আরো দু’টি গরুও উঠেছে ওই হাটে। সেগুলো দেখতেও সেখানে প্রচুর লোকসমাগম ছিলো চোখে পড়ার মতো। তবে বেশিরভাগ মানুষের চাহিদা মাঝারি সাইজের গরু। 

গত রবিবার পর্যন্ত জেলা শহর ও আশপাশের স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী পশুর হাটগুলো ছিলো অনেকটাই ক্রেতাশুন্য। তবে সোমবার থেকে পশুর হাটগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে কোরবানির ঈদকে ঘিরে তাঁর চিরায়ত রূপে। এদিন শহরের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণের একমাত্র পশুর হাটে ছোট ছোট পিকআপে করে গরু নিয়ে ব্যাপারিদের ঢুকতে দেখা যায়। ওই হাটে পারিবারিকভাবে পালন করা ছোট-বড় গরুর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন প্রান্থ থেকে খামারিরা গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। গরু ছাড়াও স্টেডিয়াম মাঠের ওই হাটটিতে গ্রামাঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণের ছাগলÑখাসি বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। সময় গড়িয়ে হাটগুলোতে যেমন বাড়ছে গবাদি পশুর সংখ্যা তেমন বাড়ছে ক্রেতা আর সাধারণ দর্শনার্থীর সংখ্যা। তবে এবছর ছোট কিংবা বড় প্রতিটি গরুর দাম বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। আর বিক্রেতারা মনে করছেন গো-খাদ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া তাই বেড়েছে গরুর দাম।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) দুপুরে শহরের স্টেডিয়াম এলাকার কোরবানির গবাদি পশুর হাটসহ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায় ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের গরু নিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় বিক্রেতারা। হাট গুলোতে পছন্দের গরু ক্রয় করতে দাম-দর করতেও দেখা যায় ক্রেতাদের। বুধবার কোরবানির পশুর হাটের শেষ দিন হলেও পরদিন বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা। জানিয়েছেন হাটের আয়োজকরা।

মৌলভীবাজার পৌরসভা আয়োজিত কোরবানির পশুর হাটের ইজারাদার ও মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ এন্টারপ্রাইজের স্বত্তধিকারী শেখ রুমেল আহমদ জানান, আমরা হতাশ, হাটে গরু বিক্রির অবস্থা গত বছরের চেয়েও কম। গো-খাদ্যের দাম চড়া হওয়ায় দামও একটু বেশি। তবে হাটে চাহিদা অনুযায়ী গরু উঠলেও বেশির ভাগ বিক্রি হচ্ছে মাঝারি সাইজের গরু।

জেলা শহরের ওই পশুর হাট ছাড়াও সদরের ঐতিহ্যবাহী দিঘিরপার, সরকারবাজার ও শেরপুরসহ আরো কয়েকটি স্থানে বসেছে জমজমাট পশুর হাট। এসব হাটের বেশির ভাগই স্থায়ী পশুর হাট হিসেবে পরিচিতি আর ঐতিহ্য রয়েছে। এর বাহিরে কমলগঞ্জের আদমপুর পশুর হাট, মুন্সিবাজার, সমশেরনগর, কুলাউড়া উপজেলার ব্রাম্মণবাজার, শ্রীমঙ্গল ও রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজারের হাটগুলোও বেশ বড় এবং পরিচিত। এসব হাটে দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা গরু ক্রয় করতে আসছেন। সব মিলিয়ে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলার ১৯টি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী মিলে ৩৪টি গবাদিপশুর হাট বসেছে। হাটগুলোতে গরু, ছাগল, ভেড়াসহ দেশি-বিদেশী গবাদি পশু নিয়ে ক্রেতারা উপস্থিত হয়েছেন।

কমলগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী স্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদার আব্দুল আহাদ ফারুক বলেন, ওই বাজারের ইতিহাসে এবছর সবচেয়ে কম পশু বিক্রি হয়েছে, আমরা পুরোপুরি হতাশ। দামও অন্য বছরের তুলনায় একেবারে কম। তিনি বলেন, এই হাটে বেশিরভাগ মানুষ ক্রয় করেছেন মাঝারি সাইজের গরু।

এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেয়া তথ্যে জানা যায়, এ বছর ঈদুল আজহায় পুরো জেলায় ৬২ হাজার ৫২টি পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরমধ্যে গরু ৪৩ হাজার ৬১৮, মহিষ ২ হাজার ৪২২ ও ছাগল-ভেড়া ১৫ হাজার ৯২২টি। ৬২ হাজার ৫২টি পশুর মধ্যে খামারিভাবে ৩৯ হাজার ৪৮৯ ও পারিবারিকভাবে ২২ হাজার ৫৬৫টি। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮০ হাজার ৬শ’টি। খামারি রয়েছেন ৫ হাজার ৫৫১ জন। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দেয়া তালিকার বাহিরেও নতুন নতুন দুগ্ধ খামার গড়ে উঠছে।

(একে/এসপি/জুন ২৭, ২০২৩)