ভাষার জন্য ভালোবাসা ও ভালোবাসার বাংলাদেশ
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান :
‘৪৮ থেকে ৫২ সাল’
সেদিন, সে সময়
ঐ ওরা
আমার মায়ের ভাষা
আমার প্রাণের ভাষা
আমার ভালোবাসার বাংলা ভাষার
টুটি চেপে ধরেছিলোঃ
অমানবিক এক হত্যা প্রচেষ্টায়।
ওই ওরা, মানে কারা?
সবাই জানেন, সবাই বুঝেন।
সেদিন -
আনন্দ- আহ্লাদে আটখানা হয়ে
বিজাতীয় ভাষা ‘উর্দুকে’ পরম মমতায়
নিজেদের মুখে তুলে নিয়েও ক্ষ্যান্ত হয়নি
বেকুব পাকিস্তানিরা।
তাই
সেদিন ওরা
পুর্বে এসে
প্রবল আক্রোশে
হামলে পড়েছিলো
বাঙালির উপর;
সজোরে ঝাপটে ধরেছিল
আমার মায়ের ভাষা
আমার প্রাণের ভাষা
আমার ভালোবাসার বাংলা ভাষাকেঃ
বাঙালির সমৃদ্ধ কলিজা
চিবে খাবে বলে।
হায়রে হায়!
উর্দু নাকি মুসলমানের ভাষা(!)
ভূতের প্রেতাত্না, গণ্ড- মূর্খ, অজ্ঞান
পাকিস্তানিরা সেদিন ‘তাই’
ওই উর্দুকে ইসলামী বটিকা বানিয়ে জোর করে
খাইয়ে দিতে চেয়েছিলঃ
বাঙালিকে।
সত্যিই আজব প্রকৃতির এক দেশ পাকিস্তান!
অদ্ভুত কিম্ভুতকিমাকার যার মন ও মানসের গঠন।
কিন্তু
ওদের বেকুবি, ওদের গোঁয়ার্তুমি
শাশ্বত ঐতিহ্যের অহংকার নিয়ে বেঁচে থাকা
বাঙালি মানবে কেন? মানেওনি কভু।
ঘৃণার আগুনে পুড়ে
অধিকতর তপ্ত হলো
সকল বাঙালি প্রাণ!
ধনুর্ভঙ্গ পণে অখণ্ড এক বন্ধন দৃঢ় একতায়
দাঁড়িয়ে গেলো বাঙালিঃ
‘নরকের দূত’
‘ পাকিস্তানি ভূত’
নুরুল আমিন-নাজিম উদ্দিনদের সমুখে। ‘পাকি’ মোহ ভেঙ্গে
জেগে উঠলো বাঙালি;
প্রতিবাদে গর্জে উঠলো
সমগ্র বঙ্গীয় সমতল।
‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে
মুখরিত হলো সমগ্র বাঙালি জনপদ।
সত্যি সেদিন
তারুণ্যের ঋষিজ অবয়ব
অসাধারণ উজ্জ্বলতায় ভেসে উঠেছিলো
বাংলার আকাশে-বাতাসে।
ঘৃণার আগুনে পুড়ে সোনা হয়ে উঠা
নিঃস্বার্থ, নির্মল তারুণ্যের প্রবল শক্তি দিয়ে
স্পর্ধিত ‘পাকি’ সিদ্ধান্তকে শক্তহাতে
মোকাবিলা করলো ‘বাঙালি’
বরকত, সালাম, জব্বার আর
সফিউরের রক্তে গড়া সিঁড়ি বেয়ে
একদিন বাঙালি পৌঁছে গেলঃ
বিজয়ের স্বর্ণ চূড়ায়!
প্রতিষ্ঠিত হল ভাষার দাবি। এখানেই কিন্তু থেমে থাকেনি ‘বাঙালি’।
একুশের পথ ধরে
মনু মিয়া- আসাদ-মতিউর
আর জানা-অজানা ত্রিশ লক্ষ প্রাণের
বিনিময়ে ‘বাঙালি’ আদায় করে নিলো
স্বপ্ন সাধের স্বাধীনতা!
প্রতিষ্ঠা করলো
স্বপ্ন সাধের বাংলাদেশ!
অবাক বিস্ময়ে সারা বিশ্ব দেখলো
কি করে ‘পাকিরা’ লেজ গুটালো-
পরাজিতের আর্তনাদে।
অবাক বিস্ময়ে সারা বিশ্ব দেখলো
‘বাঙালির’
ভাষার জন্য ভালোবাসা।
দেখলো ‘ বাঙালির’
ভালোবাসার বাংলাদেশ!