| প্রলয় সাহা |

মায়া

আমি নই,
লুম্বিনী বন ধর্মশালার ভিক্ষু।
রাজবন বিহার গেলেও হয়না
মনঃসংযোগ ধর্মোপাসনায়।
চোখ বন্ধ খোলা কত সময়ে কতবার!
তাকে আমি দেখতে পাই-
ঠিক ঠিক ততবার ।
অচেনা এক পাহাড়ি রমনী
মুখশ্রী আবদ্ধ ঝাপসা আয়নায়
শুধু নিষিক্ত শরীর ভাসে,
দু'চোখের ছায়াছবিতে অসমাপ্ত।
নিরাশ্রয় হই আপন মনে
ছুটে যাই পাহাড়ের পর পাহাড়;
খুঁজে পাওয়াতো দূরের কথা
আশা নিরাশার বুকে ঘুমায়।
রমনী তুমিও কি বিলুপ্ত!
যেমন পালকি ও কাহার।
আর আমি,
সেই এক আগন্তুক প্রদীপ
তেল সুতলি একে অপরের টানে।

ঘুমিয়ে পড়লে তুই কে বা কার!

আমি ঘুমিয়ে পড়ি অজ্ঞাত এক নারীর বুকে
যুগল হাহাকার আঁধারের মত জড়িয়ে ধরে
শান্তি পাই, গভীর নিদ্রায় ডুব দিই -
ভাবনার মাঝে ঠিক কথাটা যাচ্ছে না ।
নিদ্রার তলদেশে ঠাঁই পাওয়াটা স্বাভাবিক,
চাঁদ সওদাগরের সপ্ত ডিঙা যেমন -
ছলনার আদরে অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছিল ।
আমি কাকে পূজা করবো পাপ ভেজা দু'হাতে!
কে আবার আমার উপর ভর করেছে?
এই নারী কে গো তুই!
এতো আলো কিসের তোর মাঝে?
কপালের সিঁদুরে কার ধর্ষণের চিহ্ন!
ওষ্ঠের গোলাপের পাপড়িগুলো ছিড়েছে কে?
কে দিলো চোখের কাজলে মেঘের বর্ষণ!
বল-না আমায়; চুপ করে আছিস যে?
আজ তুই শুধুই আমার, বিক্রির এক একটা চিঠি পড়ে শুনাবি;
বল-না তাড়াতাড়ি, ঘুমিয়ে পড়লে আমাকে আর-
এই আবেগে পাবিনা ।
বলবও-না তুই কে, চেনা তো দূরের কথা।

দীর্ঘশ্বাস

কল্যাণী,
ঘুমিয়ে আছ রাতের বুকে মাথা রেখে
বিষাক্ত নেশা ঘুরছে নিথর শরীরে
কে যেন কাঁদছে গুনগুনিয়ে !
শোকের রাস্তা আজ কি ফাঁকা?
যান্ত্রিকতা সাঁতার কাটছে দৃষ্টির জলে ,
ঝুমবৃষ্টি ছবি আঁকছে কার হৃদ ফ্রেমে!
কার ঘরে তোমার বাস?
নিশ্বাসে জেগে আছ এখনো
বিশ্বাসে ছলনার ভয়,
তবুও আমি তোমার কথা বলি
আমার আমি-কে হয়তো।

অপ্রত্যাশিত এক ফুলের প্রত্যাশা

হতে পারিনি প্রিয় কোন ফুল
পাইনি হাতের স্পর্শকাতর আদর
তাই হয়তো কলি হয়ে থাকাটাই ভাগ্যে ছিল।
নীরবে দুঃখ চুষে খেয়েছিলাম
ভোমর ভ্রম নিয়ে ঘুরেছিল
বোটাতে বেড়েছিল পোকাদের ভীড়
জমেছিল জেলীর মত কি জানি?
অজান্তেই ঝরে পড়েছিলাম ভুঁইতে
মৃত্যুর আহাজারি শরীরে মেখে।
কাঁদবে কে প্রয়োজন ছিল কি!
চেয়ে থেকে স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ছুড়েছিল
মাসগুলো কয়েক বছরের সমান
গলে পঁচে গিয়েছিলাম প্রমান ছাড়াই।
কেউ একজন এসে স্তম্ভ বানিয়েছিল
কালো হরফে খোদাই করে লেখা নাম
এসে দেখে যায় কালের আচরণে
সূর্য পৃথিবীকে একবার করে ঘুরলে।
বেঁচে থেকেও পেয়েছিলাম
চেনা মুখে অচেনার দেখা
মরেও শান্তির চিঠি মেলেনি
ভার্চুয়ালের ভীড়ে ছিলাম একা, আজও একা ।
তবুও আশার ঘ্রাণ ছড়িয়ে ঘাসে
মৃত শিরোনামে বেঁচে আছি জেগে
কেউ একজন ভাবুক কিংবা বলুক
একদা তিনিই ছিলেন কষ্টের ঘামে ভেজা ফুল ।

অশ্রু

ডাক আসে মহাসমুদ্র থেকে
সময় অসময়কে জানিয়ে হালখাতার নিমন্ত্রণ
যদিও থাকেনা জাঁকালো আয়োজন ।
নিয়মের ঠিকানা কবে-ই বিলুপ্ত
ঢেউয়ের পর ঢেউ খেলে অস্বাভাবিক গতীতে
চেয়ে থাকতে পারিনা , ঝাপসা সব-ই
ভিজে একাকার স্মৃতির সব ছবি ।
হালকা ভালোতে দুঃখ একরোখার মত
দীর্ঘশ্বাস গিলে খেতে হয় তখন
স্মৃতির ছবিগুলো বালুর ঘাট
তবে ফের ডাক আসবে মহাসমুদ্রের
এই ডাক আজীবনের।