রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে সাবেক স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৮) নামে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী ওই নারী শুক্রবার (৭ জুলাই) জামালপুর সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলা দায়ের করলে রাতেই অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (৮ জুলাই) দুপুরে তাঁকে জেলহাজতে পাঠান আদালত।

গ্রেফতারকৃত মোস্তাফিজুর রহমান শেরপুর সদর উপজেলার রৌহা চড়পাড়া গ্রামের গোলাম রব্বানীর ছেলে। তিনি জামালপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি ইউনিয়নের ব্রহ্মোত্তর গ্রামের বদিউজ্জামানের মেয়ে সায়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমাকে বিয়ে করেন মোস্তাফিজুর রহমান। বিয়ের পর তাদের পরিবারে তিন সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের প্রায় ১২ বছর পর ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য মীমকে নির্যাতন শুরু করেন মোস্তাফিজুর। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মীম তাঁর স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে জামালপুর সদর আমলি আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর একই বছরের নভেম্বরে আপোষের শর্তে মোস্তাফিজুর রহমানকে জামিন দেন আদালত। জামিন পেয়ে মোস্তাফিজুর তাঁর স্ত্রীর সাথে আপোষ মিমাংসা না করে তাঁকে তালাক দিয়ে দেন।

পরে এ বছরের ৪ জুলাই সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের হামিদপুরে মৃত ইদ্রিস আলীর বাড়িতে আপোষ মীমাংসার কথা বলে মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর সাবেক স্ত্রী মীমকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর অপরিচিত এক কাজীকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান মোস্তাফিজুর। এ সময় মোস্তাফিজুর রহমান মীমের নিকট ক্ষমা চেয়ে ৪ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে পুনরায় রেজিস্ট্রি কাবিনমূলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ওই দিন তাঁরা একসঙ্গে রাত্রিযাপন করেন এবং তাদের মধ্যে শারিরীক সম্পর্ক হয়। পরের দিন সকালে স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর স্ত্রী মীমের দায়ের করা যৌতুকের মামলা প্রত্যাহার করতে বলেন। এ সময় মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে স্ত্রী মীম নতুন বিয়ের কাবিননামা চাইলে মোস্তাফিজুর তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা যৌতুকের মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এরপর মিম অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁদের নতুন বিয়ের কাবিননামা বা কাজীর কোনো সন্ধান পাননি। যৌতুকের মামলা প্রত্যাহার করানোর জন্য মোস্তাফিজুর তাঁর সাথে বিয়ের নাটক করেছেন।

মামলার বাদি সায়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা মীম জানান, তাঁর সাবেক স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান একবার তাকে তালাক দিয়ে পুনরায় বিয়ের নাটক সাজিয়ে ভুয়া কাজী দিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে তাঁর সাথে প্রতারণা করেন এবং তাকে ধর্ষণ করেন। এই প্রতারণা ও ধর্ষণের ঘটনায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নূর মোহাম্মদ জানান, সাবেক স্ত্রীকে ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে শুক্রবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

(আরআর/এসপি/জুলাই ০৮, ২০২৩)