বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটিকে কেন্দ্র করে বাদী ও বিবাদী পক্ষের উদ্যোগে আজ বুধবার সদরে একটি মানবন্ধন ও পাল্টাপাল্টি দুটি ঝাড়ু মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাল্টাপাল্টি এসব কর্মসূচি নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মহলে এখন নানা মুখরোচক আলোচনা চলছে।

জানা গেছে, নবীনগর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াছমিনের করা সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটির প্রতিবাদে 'সাংবাদিক সমাজ' এর ব্যানারে আজ বুধবার দুপুরে স্থানীয় ডাক বাংলোর সামনে একটি 'মানববন্ধন' করা হয়। তবে মানববন্ধনে মামলার আসামী সাত সাংবাদিকের মধ্যে কেবল চারজন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু নবীনগরে থাকা পাঁচটি সাংবাদিক সংগঠনের (চারটি প্রেসক্লাব ও একটি সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ) নেতৃবৃন্দসহ সিনিয়র ও মূলধারার অধিকাংশ সাংবাদিককেই মানববন্ধনে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি।

এদিকে মানববন্ধন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মামলার বাদী পৌর কাউন্সিলর (নারী) নীলুফার ইয়াছমিনের নেতৃত্বে মামলার আসামিদের (সাংবাদিক) বিরুদ্ধে মহিলাদের নিয়ে একটি ঝাড়ু মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে আসামীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়া হয়। পরে ঝাড়ু মিছিলটি উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

পরে মামলার প্রধান আসামি পুতুল বেগমের নেতৃত্বে বাদীর বিরুদ্ধে পাল্টা আরেকটি ঝাড়ু মিছিল বের করা হয়।

এদিকে সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে স্থানীয় অধিকাংশ সাংবাদিক অনুপস্থিত কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মানববন্ধনে অংশ নেয়া মামলার প্রধান আসামি দৈনিক ভোরের সময়ের প্রতিনিধি পুতুল বেগম বলেন, 'একটি মহল থেকে সাংবাদিকদেরকে মানববন্ধনে আসতে নানাভাবে বাঁধা দেয়া হয়েছে। তবে আমরা আইনী মোকাবেলার পাশাপাশি সাংবাদিকদের পাশে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো।'

এদিকে মামলার বাদী নারী কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াছমিন বলেন, 'আমি প্রকৃত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোন মামলা ও ঝাড়ু মিছিল করিনি। যারা সাংবাদিকতার নামে এই মহান পেশাটাকে কলুষিত করছে, আমি সেইসব চাঁদাবাজ ও দালালদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি মনে করি, সাংবাদিক সমাজের আয়না, আর সেই আয়না যারা ভাঙ্গে, তাদের সাথে আমার কোন আপোষ নেই।'

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সিনিয়র সাংবাদিক দু:খ করে বলেন, ‘নবীনগরে এসব অনাকাংখিত ঘটনা দেখে নিজেকে 'সাংবাদিক' পরিচয় দিতে এখন লজ্জা হয়। কিছু সংখ্যক নামধারী সাংবাদিকের চাল চলন, কথাবার্তা ও তাদের অপসাংবাদিকতা সত্যিই মহান এই পেশাটাকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করছে। তাই আমরা মনে করি, মামলাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া খুবই দরকার।'

প্রসংগত, কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মামলার আসামী হওয়া সাত সাংবাদিক 'শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া সন্তান সেজে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন' এবং ভূয়া সন্তান মহিলা কাউন্সিলরের ভাতা স্থগিত' শিরোনামে তাদের স্ব স্ব ফেসবুক ও পত্রিকায় গত বছরের শেষের দিকে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করেন।

ফেসবুক ও পত্রিকায় প্রকাশিত ওইসব সংবাদকে 'সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মানহানীকর' দাবী করে কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াসমিন ওই সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আলোচিত ওই মামলাটি করেন (মামলা নং-১৫/২০২৩ ব্রাহ্মণবাড়িয়া)।

(জিডি/এসপি/জুলাই ১২, ২০২৩)