মোহাম্মদ ইলিয়াছ


দেশরত্ন শেখ হাসিনা এখন শুধু একজন ব্যক্তি নয়, একটি আদর্শের নাম, একটি চেতনার নাম, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের একটি অনুভূতির নাম। তিনি তাঁর সততা, দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ ও কঠিন পরিশ্রমে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।সেখানে শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্রই শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বড় শক্তি তিনি মহান জাতির পিতার সন্তান। ছোট বেলা থেকেই দেখেছেন পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিব এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য কত সংগ্রাম, কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের এই ভালোবাসা তিনি পিতার কাছ থেকেই পেয়েছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মানের জন্য। সেজন্যই আজ বাংলাদেশের অবস্থান একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে। "উন্নয়নের রোল মডেল" হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকেই উদাহরণ হিসেবে দেয়া হয়। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর অবদান আজ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। শান্তি,গণতন্ত্র,স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার,দারিদ্র্য বিমোচন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

১৯৯৬ সালে প্রথম বার রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতায় এসে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংহতি বিষয়ক সংস্থা "ইউনেস্কো" কর্তৃক ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি আদায় ছিল বড় সাফল্য। কেন না বাংলাই একমাত্র ভাষা, যে ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। আজ পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রসমূহ এ দিবসটি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে। এটাই বাংলাদেশের কৃতিত্ব।

তিনিই বিশ্বের অন্যতম নেতা যিনি বারংবার জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি ও চ্যালেঞ্জকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। স্বপ্লোন্নত ও দ্বীপরাষ্ট্র সমূহে জলবায়ু পরিবর্তনে যে কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে সে বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সারা বিশ্বে তিনিই জোরালো কণ্ঠস্বর। সঙ্গত কারণেই জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে "চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থ" পুরস্কারে ভূষিত করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমারের সাথে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সমুদ্রসীমার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভারতের কাছ থেকে ১৯৪৬৭ বর্গ কি.মি ও মিয়ানমারের কাছ থেকে ৭০ হাজার বর্গ কি.মি এলাকায় অধিকার আদায় করা হয়েছে। কোন প্রকার সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়া এ ধরনের বিরোধ নিস্পত্তির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। দীর্ঘ ৪১ বছর পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বাংলাদেশ ১১১ টি ছিটমহলে ১৭ হাজার ১৬০ একর জমি পেয়েছ, ভারত পেয়েছে ৫১ টি ছিটমহলের ৭ হাজার ১১০ একর জমি।

বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র সমূহ যখন জঙ্গিবাদের কালো থাবায় আক্রান্ত,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খাচ্ছে,সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির কারণে জঙ্গী দমন ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। হলি আর্টিজমের ঘটনাসহ আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা যেভাবে দ্রুত মোকাবেলা করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বিশ্বনেতৃত্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মডেল দেশ এখন বাংলাদেশ। জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষমাত্রা অর্জনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনা ও সফল বাস্তবায়নের ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। শুধু ৪৮ টি স্বল্পন্নোত দেশই নয় অনেক উন্নয়নশীল দেশ থেকেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়।

যখন মিয়ানমারে জাতিগত নিধনে লক্ষ লক্ষ মানুষ অসহায়,সম্বলহীন হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত,পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যখন সীমান্ত সীল করে দিয়েছিল তখনই অসহায় মানুষ গুলোর কাছে দেবদূত হয়ে আবির্ভূত হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সীমান্ত দরজা খুলে দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী শিবির এখন বাংলাদেশে। তলাবিহীন ঝুড়ি আজ ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ যাবতীয় ভরনপোষণের দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের সকল দেশের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন "বিশ্ব মানবতার মা" হওয়ার বিরল সম্মান।
করোনামহামারি কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। গত ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পরই তিনি দায়িত্বশীলতার সাথে লকডাউন এবং জীবন-জীবিকার সচল রাখার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

উন্নত দেশগুলো যখন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ব্যর্থ তখন প্রধানমন্ত্রীর জীবন ও জীবিকাকে গুরুত্ব দিয়ে যেসব অভিনব পন্থা গ্রহণ করেছিলেন যার ফলে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সাফল্য লাভ করেছে। মৃত্যুহার সর্বনিম্ন পর্যায় রয়েছে। এতবড় বিপর্যয়ের পরও অর্থনীতি একটি মজবুত অবস্থানে রয়েছে। করোনা শনাক্তের একমাসের মধ্যে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং অর্থনীতির চাকা সচল থেকে সবসূচকেই বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এই মহাবিপর্যয় কালে বিশ্বনেতাদের সাথে একাধিক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিটিং করে একসাথে সংকট মোকাবেলায় কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এবং বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য তহবিল গঠনের প্রস্তাব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।

বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব মন্দার কারণে উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিও যখন টালমাতাল তখন বাংলাদেশ শুধু মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই হয়নি এক দশক ধরে জিডিপি ৭ শতাংশের উপরেই ধরে রেখেছে। মহামারি করোনা কালেও এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি ভালো থাকবে বলে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক মন্তব্য করেছে। বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, এটা কিভাবে সম্ভব? সারা বিশ্বই যখন অর্থনৈতিক ক্রান্তি কালে তখন বাংলাদেশের এই সাফল্যের রহস্য কি? এটাই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠতা, উন্নয়নের ম্যাজিক।

রাষ্ট্র পরিচালনার অসাধারণ দক্ষতা ও সাফল্যের জন্য তিনি পেয়েছেন বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য মনোনীত হন ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম কর্তৃক ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ', পার্বত্য চট্রগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউনেস্কো কর্তৃক ‘হুপে বোয়ানি' শান্তি পুরস্কার, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (FAO) কর্তৃক ‘সেরেস পদক',গ্লোবাল ‘ইউমেন লিডারশীপ’অ্যাওয়ার্ড, শিশুমৃত্যু হ্রাস সংক্রান্ত জাতিসংঘ কর্তৃক এমডিজি অ্যাওয়ার্ড ২০১০, ইউনেস্কো কর্তৃক ‘কালচারাল ডাইভারসিটি' পদক, সর্ব ভারতীয় শান্তিসংঘ কর্তৃক ‘মাদার তেরেসা' পদক, ইন্দ্রিরা গান্ধী শান্তি পদক, মহিলা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে জাতিসংঘ কর্তৃক সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, রোটারি পিস অ্যাওয়ার্ড, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩, ইউনেস্কো কর্তৃক ‘শান্তি বৃক্ষ' পদক, তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের ক্ষেত্রে স্বীকৃতি স্বরূপ ‘সাউথ-সাউথ ভিশনারী পদক, চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ, আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার,গ্লোবাল জিএভিআই কর্তৃক ‘ভ্যাকসিন হিরো' পুরস্কারসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে পেয়েছেন অনেক সম্মান সূচক ডিগ্রি।

শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে দুইটি যুগান্তকারী প্রস্তাব আনে, যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রথমটি হল ‘অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার’ সংক্রান্ত আর দ্বিতীয়টি জনগনের ক্ষমতায়ন’ সংক্রান্ত। তিনি বিশ্বাস করেন সবারই অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা দরকার। কেউ যেন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। এই দুটো প্রস্তাব সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে, যার ফলে জাতিসংঘের সাধারণ সভা ও সব গুলো সংস্থার কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি বিরাট সাফল্য।

শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি তৃতীয় বিশ্বের একজন মানবিক নেতা হিসেবে বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছেন। অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা ভাবনা,তাঁকে করে তুলেছে এক অনন্য রাষ্ট্রনায়ক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে তিনি আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে শেখ হাসিনাই পারে, শেখ হাসিনাই পারবে। শেখ হাসিনা নির্লোভ, জনগণের কল্যাণ ছাড়া কোন চাওয়া পাওয়া নেই। জনগণের কল্যাণ প্রশ্নে কোন আপস করেন না। কঠোর পরিশ্রম ও সময়োপযোগী সিন্ধান্তের কারণে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। যেকোন সংকট, দুর্যোগ এমন কি করোনামহামারির সময় জনগণ তাকিয়ে থাকে শেখ হাসিনার দিকে। জনগণ মনে করে তিনিই জাতির আলোকবর্তিকা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আলোচিত ও প্রশংসিত একটি নাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর আর কোন বাঙালি রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে এত সম্মান আর ভালোবাসা পায়নি, যেমনটা পেয়েছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের অহংকার,সারা বিশ্বের বিস্ময়।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।