জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : দিন দিন কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড় ও নদী সংলগ্ন শাখা খালগুলো প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের মাধ্যমে দখল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া পাচ্ছে। এতে করে নদী হারাচ্ছে তার গতিপথ। অনেকস্থানে বিলীন হয়ে গেছে চরপাথরঘাটার খোয়াজনগর খাল ও মইজ্জ্যারটেক খাল। ক্ষীণ হয়ে যাওয়া খালগুলো এখন মৃত প্রায়। এ যেন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে দখল হচ্ছে নদী তীর ও খাল। একাধিকবার নদী রক্ষা ও প্রশাসন ঘটা করে অভিযান পরিচালনা করলেও রক্ষা পাচ্ছে না নদী ও খাল।

গত কয়েক দিন আগেও বাংলাবাজার ঘাট থেকে নদী ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ উচ্ছেদ করে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন কর্ণফুলীর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বন্ধ হচ্ছে না এ নদী ও খাল দখল।

জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। এখানে মইজ্জ্যারটেক খাল, লেইঙ্গা খাল, শিকলবাহা খাল, খোয়াজনগর খাল, বড়উঠান ও জুলধা খাল মৃত বললেই চলে । অনেক এলাকায় খালের কোন চিহ্ন রাখেনি দখলকারীরা। সরকারি খাল দখল করে অবৈধভাবে বাড়িঘর ও দোকানপাটসহ পাকা স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসব চলছে। খালগুলো উপজেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে খাল দখলকারীরা অনেকেই কোনো অনুমতি নেয়নি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, পাকা বা কাঁচা দোকান ঘর নির্মাণের কোনো বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি।

এক সময় এ জনপদ নদীকেন্দ্রিক হয়ে গড়ে উঠেছিল। এখানকার কৃষি ও শিল্পও এক সময় নদী নির্ভর ছিলো। কিন্তু এখন বেশীরভাগ খাল দখলদারদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শিগগরই দখলদারদের নোটিশ প্রদান করা হবে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে খোয়াজনগর খাল দখল মুক্ত হয়নি। খালের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প কলকারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নদী ও খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে নদীর তীর দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করায় নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে।

খোয়াজনগর এলাকার জনপ্রতিনিধি আবদুন নুর বলেন, কর্ণফুলী নদী তীর ও খাল দখলকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দখল মুক্ত করা দরকার। বিশেষ করে গ্রামের ভেতরের খাল দখল হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। মশার উপদ্রব বাড়ছে। পানি চলাচল করতে পারছে না।’

চরপাথরঘাটা ভূমি সহকারি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ বলেন, ‘সঠিক সময়ে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়নি হয়তো। তাই খাল দখল অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে মামলা করতে পারিনি। বিষয়টি আমরা আমাদের সহকারি কমিশনার ভূমিকে জানাবো। আশা করি ব্যবস্থা নেবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিয়ুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘খাল গুলো পূনঃখনন করা হলে। চাষাবাদে সহায়ক হবে কৃষকের। ধারাবাহিকভাবে উপজেলার সমস্ত সরকারি খাল গুলো উদ্ধার করে পানি চলাচল সচল রাখা হবে। আর খোয়াজনগর খালও উদ্ধার করা হবে।’

কর্ণফুলীর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে দখল হয়ে যাওয়া নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এলাকার সচেতন মানুষ যদি কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তবে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মুক্ত করা হবে দখল হয়ে যাওয়া নদী ও খাল। একই কথা বলেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস।

(জেজে/এএস/জুলাই ১৪, ২০২৩)