প্রবীর সিকদার : বুধবার ছিল একাত্তরের ঘাতক, জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর রায়ের দিন। এই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে সংঘটিত নৃশংস মানবতা বিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকায় নিজামীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দিয়েছেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত মানুষ এই রায়ে খুশি হয়েছেন। যারা একাত্তরের নৃশংসতা দেখেছেন কিংবা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছেন তারা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। আমি তাদেরই একজন।

আমি অবশ্য মানসিকভাবে যেকোনো রায়ের জন্যই তৈরি ছিলাম। আমার বিবেচনায় ছিল, একাত্তরের এই সব ঘাতক শিরোমণিদের গাড়িতে বাড়িতে একদিন জাতীয় পতাকা উড়েছে। সেইদিন আমরা কেউ ওই অপকর্মের প্রতিবাদ করিনি। সেই ঘাতক শিরোমণিদের দীর্ঘদিন জেলে আটক রেখে বিচার করা যাচ্ছে, আমি তাতেই চরম তৃপ্ত। ফাঁসির রায় হয়েছে আমি খুশি। তার অর্থ এই নয় যে, ফাঁসির দণ্ড না হলে আমি হতাশ হতাম। বলতে দ্বিধা নেই, নিজামীর ফাঁসির রায় তথা যুদ্ধাপরাধীদের সফল বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বের আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট সরকারের। শেখ হাসিনা সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি স্যালুট জানাই।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে খুনি জিয়া-মুস্তাক চক্র একাত্তরের মহান অর্জন বাংলাদেশকে একটি 'মিনি পাকিস্তান' বানিয়েছিল।একাত্তরের ঘাতকদের রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠা ও তাদের গাড়ি বাড়িতে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানোর ঘটনা সেই সত্যকেই প্রমাণ করে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই, তাদের ভরসা কেন্দ্র এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাই পারেন, শেখ হাসিনাই পারবেন 'মিনি পাকিস্তান'-এর খোলস ভেঙে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে। বহমান সময়টি কোনও স্বাভাবিক সময় নয়। এই সময়ে আমরা গণতন্ত্র মানবাধিকার বুঝি না, আমরা শুধু বুঝি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি সুখি সুন্দর বাংলাদেশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে শেখ হাসিনার আপসহীন অবস্থান আমাদের প্রাণে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আমি বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে বিজয়ের ধারা শুরু হয়েছে তা শুধু অব্যাহতই থাকবে না, দিন দিন সেই বিজয়ের ধারা আরও প্রবল ও সংহত হবে।

আমরা অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ চাই। আর সেটি সফল করতেই চাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের অব্যাহত সাফল্য।

রাজাকার চক্র নিপাত যাক। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের এই বাংলাদেশের।