জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক মোড়ে মুরগী ও মাছের খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানার গন্ধে সাধারণ মানুষের জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যস্ততম সড়কের পাশে অ-পরিস্কার স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে খাদ্যজাত সামগ্রী তৈরি করে পরিবেশের বারটা বাজালেও কোন সংস্থা স্থায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও বন্ধ হচ্ছে না এসব কর্মকাণ্ড।

মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় যুবক জানান, মইজ্জ্যারটেক এলাকা হয়ে আসা যাওয়া কালে পাশের খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানার বিষাক্ত পঁচা গন্ধে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই স্থানীয় প্রশাসনের উচিত অভিযান পরিচালনা করে স্থায়ী সমাধানের।

গরু-ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগির ফার্ম, খাদ্য তৈরি কারখানা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। যেখানে এ ধরনের ফার্ম লোকালয় থেকে দূরে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে এসব প্রতিষ্ঠান এখন লোকালয়ে গড়ে উঠছে। ফলে ওইসব এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ভাবে দূষিত হচ্ছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন।

এছাড়াও কর্ণফুলীতে লোকালয় ও পরিবহন স্টেশনসহ মানুষ চলাচলের রাস্তার পাশে গড়ে তুলেছেন একাধিক মুরগির খামার। একেকটি খামারটিতে ৪টি, বাড়ির বাইরের আঙিনায় ৩টি ও বাড়ির ভেতরের আঙিনায় ১টি করে সেড রয়েছে। এসব খামারের চারপাশে শত শত পরিবারের বসবাস। যথাযথ নিয়মে খামার পরিচর্যা না করা ও মুরগির বিষ্টা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে যত্রতত্র ফেলার কারণে এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে অতিষ্ট এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, মইজ্জ্যারটেক মুরগী ও মাছের খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানার খামার থেকে মুল সড়কের দূরত্ব ১০ গজ। ফলে দুর্গন্ধে টিকতে পারছে না ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাছাড়া পাশের মইজ্জ্যারটেক খালে ফেলা হচ্ছে যত আবর্জনা আর ময়লা। খালের মাঝখানে বাধ নিয়মিত পানি আসতে বাধা হওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে এলাকাবাসীর মাঝে রোগ ব্যাধি।

শিকলবাহার শুক্কুর বলেন, মুরগির খামারের গন্ধে তাদের এখানে বসবাস করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। একটু বাতাস হলেই গন্ধে এ এলাকায় টিকতে পারেন না তারা। মইজ্জ্যারটেকের দোকানে বসাও দায়। খামারের মালিক কে অনেক বার নিষেধ করলেও তারা কিছুই শোনেন না। বহুদিন ধরে চলছে এসব বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। এই গন্ধ থেকে বাঁচতে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিফতরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রুমন তালুকদার বলেন, প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে গবাদি পশু হাঁস-মুরগি খামারের রেজেস্ট্রেশন দেওয়া হয় এবং দেখা হয় সেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কিনা। যদি কোনো খামার পরিবেশের জন্য হুমিক ও আশপাশের বসবাসরত জনগণের জন্য ক্ষতিকারক মনে হয় তাহলে তখন তার রেজিস্ট্রেশন সরকার বাতিল করতে পারে। সরজমিনে তদন্ত করে ফার্মের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করাসহ বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী জানান, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে কিছুদিন আগেও জরিমানা করা হয়। এখনো যদি আইন না মেনে কারখানায় চালায় তাহলে শিগগরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর অভিযানে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ব্যতিত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরির অপরাধে হাক্কানি কর্পোরেশন লিমিটেড নামক এই প্রতিষ্ঠানকে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

(জেজে/এএস/জুলাই ১৭, ২০২৩)