জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর খোয়াজানগর খালটি ভরাট করে দিন দিন বিভিন্ন স্থাপনা ও কারখানা নির্মাণের অপচেষ্টায় লিপ্ত প্রভাবশালী মহল। এতে খালের পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে, চরমভাবে দুর্ভোগে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দখলবাজরা যে যার ইচ্ছে মত খালটি দখল করেছেন। খালের দু’পাশে বড় বড় দালান ও বাড়িঘর। টাইটানিক জাহাজের মতো এসব বিল্ডিংগুলো বেশির ভাগ খালের উপর। অথচ, খালপাড়ের মানুষগুলো নয়, খালটিকে ক্রমান্বয়ে গিলে খাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। দখল আর ভরাটে সমস্ত খালের নকশা বিলীন হওয়ার পথে।

সরকারি খালটি দখল দূষণে হারিয়ে যেতে বসলেও প্রশাসন অনেকটা নির্বিকার। কিছুদিন গেলে মনেই হবে না এখানে একটি খোয়াজনগর খাল ছিল। ১৬ বছর আগেও এ খাল দিয়ে নৌকায় যাতায়াত করতো গ্রামের মানুষ। কিন্তু এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, চরপাথরঘাটা এলাকার খোয়াজনগর খাল দিয়ে বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। খালটি দিন দিন সরু হওয়ার ফলে, বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বন্ধের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়েন এলাকাবাসী।

এছাড়াও, গুটিকয়েক প্রভাবশালীরা আশেপাশের নিরীহ লোকের জমি দখল ও তাদের মামলা দিয়ে হয়রানি করারও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে খোয়াজনগর এলাকার সাবেক ইউপি নুরুল আলম জানান, বলতে গেলে বৃটিশ আমলের এই খোয়াজনগর খাল দিয়ে সাম্পান / নৌকা, বোট চলাচল করত। গ্রামের মানুষ শহর থেকে সওদা করে ঘরে ফিরত এ খাল দিয়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে কিছু লোকজন খালটির দু’পাশে মাটি দিয়ে ভরাট করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জোয়ারে ঘরবাড়িগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের। ছড়ায় বিভিন্ন রোগবালাইও। খালটির মাঝে মাঝে ফাঁকা থাকলেও ময়লা আবর্জনা আর বন্ধ পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা তৈরির কারখানায় রুপান্তরিত হয়েছে।

এই খালটি তথ্যমতে পাওয়া যায়, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের প্রাচীন এই খোয়াজনগর খালটি ছিল বৃটিশ আমলের তৈরি । খালটির উৎপত্তি নয়াহাট সেতুর পাশ দিয়ে বয়ে ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ি হয়ে নওয়াব আলী মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত। ওখান থেকে উত্তর দক্ষিণ মুখে নাজিরের দোকান বরাবর সীমারেখা নকশায়। খতিয়ানে উল্লেখ্য রয়েছে আর এস ৬৯৪ দাগের তৎকালিন মালিক ভারত বর্ষ । বি এস দাগ ৪৯৪। পি এসে স্থানীয় লোকজনের নামে বন্দোবস্তি দেওয়া হয়। খোয়াজনগর খালে জমির

পরিমাণ ৮ একর ৮০ শতক। পূর্বে খালটির প্রস্থ ছিল ৭০ থেকে ৫০ ফুট। বৃটিশ শাসনের পরে খালটি দুপাশের কিছু জমি চরপাথরঘাটা ২ নং ওয়ার্ডের প্রয়াত মতিউর রহমানের ভাইবোন এবং শহরের আবদুল হক দোভাষের নামে ইজারা বন্দোবস্তি হয়। তবে এ যাবত কারো নামে বিএস হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের পক্ষে আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘এই খালটি দখলমুক্ত করা। অতীব জরুরী। শিকলবাহার খালটি যেমন খনন করা হয়েছে। তেমনি খোয়াজনগর খালটি পুনরুদ্ধারের এখনই মোক্ষম সময়। কিন্তু দখলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা কে দায়ি করেছেন।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ পিযুষ কুমার চৌধুরী জানান, ‘খোয়াজনগর খালটির নকশা দেখে কতটুকু খাল দখল হয়েছে সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিয়ে খালটি উদ্ধার করা হবে। দখলদাররা খাল তীরে অবৈধভাবে যদি স্থাপনা গড়ে তোলেন। দীর্ঘদিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। যার ফলে, দিন দিন দখলদারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে হয়তো।’

(জেজে/এএস/জুলাই ১৯, ২০২৩)