চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় অংশ নেওয়া খুনিদের তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এ কথা বলেন মোখলেসুর রহমান। তিনি বাবুলের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ইসলামের কর্মচারী।

আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে মোখলেসুর রহমান বলেন, “মাহমুদা ভাবি খুনের দুই দিন পর বিকেল তিনটার দিকে সাইফুল স্যার আমাকে অফিসে যেতে বলেন। আমি বছিলায় অফিসে গিয়ে অ্যাকাউন্টসের মামুন স্যারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা গ্রহণ করি। টাকা নিয়ে আমি সাইফুল স্যারকে কল দিয়ে টাকাগুলো কী করব জিজ্ঞেস করি। পরদিন বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটার দিকে এমডি স্যার (সাইফুল) আমাকে আবারও কল দিয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন (মাহমুদা হত্যার আসামি নিখোঁজ কামরুল শিকদার মুসার আত্মীয়) নামের একজনের নম্বর দেন। এর আগে সাইফুল স্যারের নির্দেশে টাকার সঙ্গে আমাকে দুটি গ্রামীণফোনের মুঠোফোন নম্বর এবং আনোয়ার ও ওয়াসিমের নাম দেওয়া হয়। ওই দুটি বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা পাঠাতে বলা হয় আমাকে।”

মোখলেসুর রহমান সাক্ষ্যে আরও বলেন, “আমি মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাউসুল আজম মার্কেট থেকে ২ লাখ ৩০ বা ৪০ হাজার টাকা পাঠাই। বাকি ৭০ হাজার টাকা আমি মোহাম্মদপুর বছিলায় র‍্যাব কার্যালয়ের পাশে রিপন টেলিকম থেকে পাঠাই।”

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুর রশিদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “বাবুল তার সোর্স মুসাকে তার আত্মীয়ের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা পাঠান স্ত্রীকে খুন করার জন্য। বাবুলের বন্ধু সাইফুলের কর্মচারী আদালতে জবানবন্দিতে তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। এর আগে গত সোমবার দেওয়া সাক্ষী সরোয়ার আলমের জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।”

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহিরকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে হত্যার শিকার হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে তিন জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মিতু হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এরপর পাল্টে যায় মিতু হত্যা মামলার গতিপথ। পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে বাবুল আক্তারই মিতু হত্যার মূল আসামি।

বর্তমানে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। গত ৯ এপ্রিল মিতুর পিতা ও মামলার বাদী মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে আদালতে বিচার শুরু হয়। গত ১৩ মার্চ মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

(জেজে/এএস/জুলাই ১৯, ২০২৩)