শৈলকুপা প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিকল্পিতভাবে ওটি অচল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এসবের বিপরীতে হাসপাতালের চারপাশ দিয়ে গজিয়ে ওঠা অনুমোদনহীন ক্লিনিকগুলোতে সিজার অপারেশনের রোগী পাঠানো হচ্ছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব করছে বলে অভিযোগ। হাসপাতালটিতে সপ্তাহে ৩-৪টা সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে, অন্যদিকে ক্লিনিকগুলোতে হচ্ছে ৩০/৪০ টা। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে যেসব ডাক্তার নিয়মিত ওটি করেন, তাদের ওটি করতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে লিখিতভাবে, নানা ধরনের খোঁড়া অযুহাত দেখিয়ে ডাক্তারদের বসিয়ে রাখা হচ্ছে। আর যেসব ডাক্তার হাসপাতালের টিএইচও’র সাথে মিল রাখছে তাদের দিয়ে নামমাত্র ওটি করানো হচ্ছে। বেশীরভাগ রোগীদের পাঠাানো হচ্ছে ক্লিনিকে। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রোগীরা ক্লিনিকে এসে সিজার করাতে বাধ্য হচ্ছে । এতে সরকারী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দারিদ্র ও সাধারণ রোগীরা। বিশেষ করে হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে এমন নানা অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ।

সম্প্রতি নিয়মিত সিজার অপারেশনকারী ডাক্তার মাহবুবুল আলম পারভেজ কে নোটিশ দিয়ে অপারেশন না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে ডেলিভারী-প্রসূতি রোগীরা ছুটছে ক্লিনিকে, বাড়তি খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া গাইনি কনসালটেন্ট, এ্যানেসথেসিয়া সহ প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও জনবল সংকটে উপজেলার ৩লাখ ৬১ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশা চলছে। হাসপাতালের এসব অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সিভিল সার্জন বরং তিনি ক্লিনিক ও হাসপাতালের এমন অনিয়ম কে সাপোর্ট করছেন বলে অভিযোগ। ফলে কোন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও ডাক্তারদের মধ্যে বিরোধ আর জনবল সংকটে সেবার মান ও নানা অযুহাতে কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রয়োগ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিশেষ করে অপারেশন থিয়েটার (ওটি)তে চলছে অচলাবস্থা, নেই প্রশিক্ষিত ডাক্তার। সিজারিয়ান অপারেশন করতে না পারায় নিন্ম আয়ের মানুষ পড়ছে বিপাকে।

গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে গাইনি কনসালটেন্ট, এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় জোড়াতালি দিয়ে সপ্তাহে দুদিন কোনরকম চলছিল ওটি। তবে কোন রকম কারণ দর্শানো ছাড়ায় হাসপাতালের সহকারী সার্জন গাইনি বিভাগের প্রশিক্ষিত ডাক্তার মাহবুবুল আলম পারভেজ কে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অপারেশন থিয়েটারে(ওটি) অপারেশন না করতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন। গত মাসের ২৭ তারিখে এমন আদেশ দেয়ার পর থেকে চলছে অচলাবস্থা, প্রশিক্ষত ডাক্তাদের অভাব দেখা দিয়েছে গাইনি বিভাগে। এমন অবস্থায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহ গর্ভবতী মায়েরা সরকারী হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করলেন ডাক্তার মাহবুবুল আলম পারভেজ।

এদিকে হাসপাতালে ৩বছরের বেশী সময় ধরে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন অকেজো সহ সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষধ না পাওয়া এবং অভিযোগের অন্ত নেই। আর গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে একটু বাড়তি সেবা, ফ্রী চিকিৎসার জন্যে আসেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা আসেন বলে জানান।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুজায়েত হোসেন জানান, সদর হাসপাতালের একজন এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার কে লোকাল ব্যবস্থাপনায় গেস্ট হিসাবে এনে সপ্তাহে ২দিন সিজার অপারেশন কার্যক্রম চালু আছে।

এদিকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদ আল মামুন বলছেন গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে কর্তৃত্ব বা স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে না, তিনি দাবি করছেন কিছু অভিযোগের কারণে ডাক্তার মাহবুবুল আলম কে ওটি থেকে সরানো হয়েছে। কারণ দর্শানো ছাড়া কেন এমন নির্দেশনা দেয়া হলো তার জবাব দেননি।

এদিকে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, ডাক্তার মাহবুবুল আলমের সাথে টিএইচও ডাক্তার রাশেদ আল মামুনের কথা কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডা হয়, এসবের জের ধরে ওটি না করতে সাময়িক নির্দেশ দেয়া হয়েছে, অন্য কোন কারণ নেই। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি করে রিপোর্ট ঢাকা পাঠানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন ওটিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই।

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার লোক সংখ্যা ৩লাখ ৬১ হাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট, এখানে প্রথম শ্রেণীর ৩৬ জন ডাক্তারের বিপরীতে আছেন মাত্র ২১ জন। গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে নেই গাইনি কনসালটেন্ট, এ্যানেসথেসিয়া সহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। ১ম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীর মোট ২০৯টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৩০ জন।

(এসআই/এসপি/জুলাই ১৯, ২০২৩)