ঝালকাঠি প্রতিনিধি : বরিশালের উদ্দেশ্যে ভান্ডারিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উল্টে পুকুরে পড়ে দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। খুলনা বরিশাল মহাসড়কে ঝালকাঠির গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ছত্রকান্দা নামক এলাকায় শনিবার সকাল ১০ টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছে অন্তত ৩৫ জন যাত্রী। এদের মধ্যে একজন যাত্রী পুলিশ সদস্য গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মামুন শিবলীকে প্রধান করে কমিটিকে ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

ঝালকাঠি বাস ও মিনিবসি মালিক সমিতির বাসারস্মৃতি পরিবহন (ঢাকা মেট্রো ব-১৪৬৫৪৯) যাত্রীবাহী বাসটি ছাদে এবং ভিতরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দ্রুত গতিতে বরিশাল যাবার সময় উল্টে গিয়ে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। বাসের চালক মো. মোহন (৩৫) দূর্ঘটনাস্থলে এসে তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় বাসটি উল্টে ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পুকুরে পড়ে যায়। নিহতদের মধ্যে নারী ৮ জন, শিশু ৩ জন এবং পুরুষ যাত্রী ৬ জন। এদের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় জানা নিহতরা হলো পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার পান্না মিয়ার পুত্র তারেক রহমান, (৪৫), একই উপজেলার মুজাফফর আলী মোল্লার পুত্র ছালাম মোল্লা (৬০), ভান্ডারিয়া পৌরসভার ছালাম মোল্লার পুত্র শাহিন মোল্লা (২৫) ও লাল মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম (৬০), পুত্র আবুল কালাম, পশরবুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদারের কণ্যা সুমাইয়া (৬), শিয়ালকাঠি গ্রামের মৃত ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০) ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা নিজামিয়া গ্রামের মাওঃ নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৩), কণ্যা খুসবু আক্তার (১৭), একই উপজেলার বলাই বাড়ি এলাকার নূরুল ইসলামের পুত্র নয়ন (১৬), বরিশালে বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরবোয়ালিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র আব্দুল্লাহ (৮), বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জের রিপন হোসেনের কণ্যা রিপা মনি (২) ও স্ত্রী আইরিন আক্তার (২২), ঝালকাঠির কাঠালিযা উপজেলার বাঁশবুনিয়া গ্রামের জিয়াউর রহমান খোকনের স্ত্রী ছালমা আক্তার মিতা (৪২)।

খবর পেয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী, ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম দূর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাসপাতালে খোজ খবর নিয়ে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
এ বাসে থাকা ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রী আজাদ হোসেন (৫০) জানায় তিনি লক্ষীপুর থেকে ভান্ডারিয়া এসে বরিশালের উদ্দেশ্যে বাসে উঠেন। ভিতরে বসা এবং দাড়ানো শতাধিক যাত্রী ছিল। অপর যাত্রী পিয়ারা বেগম (৪৫) জানায় শিশুকন্যা সুমাইয়া (৬)কে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলেন। এসময় ঘটনাস্থলে এসে উল্টে গিয়ে বাস পুকুরে পড়ে যায়। আমি কোন রকম জানালা থেকে মাথা বের করে মেয়েকে হাতের কাছে পেয়ে টেনে বের হই। তখন দেখি সে মৃত। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর যাত্রী নাইমুল ইসলাম বলেন, আমি ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে এই গাড়িতে যাচ্ছিলাম। গাড়ীর ভিতরে এবং ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দুর্ঘটনা স্থল থেকে দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে। আমি ৩/৪ মিনিট পানির নিচে থাকার পর জানালা থেকে বের হই। আমার মাথায় এবং হাতে আঘাত লেগে কেটে যায়।

উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয়া ঝালকাঠি দমকল বাহিনীর সদস্য মামুন জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে গাড়ীর ভিতরে ডুব দিয়ে একের পর এক মৃতদেহ বের করে আনি। আরো কিছু যাত্রীর পা ধরে টানাটানি করলেও তাদের মৃতদেহ আনা যাচ্ছিলনা। তারা বাসের ভিতরে সিটের নিচে চাপা পরে থাকায় তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করতে একটু সময় লেগেছে।

ঝালকাঠি বাস মালক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আকন বাসটির মালিক। তিনি ১ মাস ধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাসের চালক মোহন (৩৫) ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে আছে। তবে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এ বিষয়ে কিছুই জানা না গেলেও মালিক সমিতির দাবি সব কিছু সঠিক আছে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডাক্তার দ্বীন মোহাম্মদ জানান, আমরা দূর্ঘটনার খবর পেয়ে এখানে ১২ জন চিকিৎসক আহতদের দ্রæত চিকিৎসা দিয়ে আসছি। আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা ছেড়ার ক্ষত রয়েছে।

এই দূর্ঘটনার বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম জানান, আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের সাথে আলোচনা করে আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়না তদন্ত ছাড়াই মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে। দূর্ঘটনার বিষয়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়ছে।

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম জানান, আহদের চিকিৎসায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পাশাপাশি নিহতদের মৃতদেহ নেয়ার বিষয়ে স্বজনদের আপত্তি না থাকায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। নিহতদের ৩ জনের পরিচয় জানা যায়নি।

(এমআর/এএস/জুলাই ২২, ২০২৩)