দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বরসহ ফ্লাইওভারে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৩১ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় পদ্মা সেতুর ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ফরিদপুরের ভাঙ্গা গোলচত্বরসহ ফ্লাইওভারগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। গত ৬ জুন থেকে ইন্টারচেঞ্জ এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার ইন্টারচেঞ্জের ভাঙ্গা গোলচত্বর, বগাইল ওভারব্রিজ ও মালিগ্রাম ওভারব্রিজে প্রায় দেড় মাস ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। মূলত ৩১ লাখ টাকা বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। ফলে ওই এলাকাগুলোতে সন্ধ্যার পর সৃষ্টি হচ্ছে ভুতুড়ে পরিবেশ।

স্থানীয় ও সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, বিদ্যুতের আলো না থাকায় ওই এলাকাগুলোতে সন্ধ্যার পরই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২৩টি জেলার এ প্রবেশদ্বারটি রাত হলেই ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হচ্ছে। এতে করে ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে।

স্থানীয় ফুচকা ও আইসক্রিম বিক্রেতা খবির শেখ বলেন, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভালোই বেচা-বিক্রি হতো। মাস দেড়েক ধরে বিদ্যুৎ বন্ধ। তাই সন্ধ্যার পর আর ওখানে যাই না। বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নামার আগেই ওই এলাকাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এ কারণে চুরি-ছিনতাইয়ের শঙ্কায় লোকসমাগম আর নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ মাতুব্বর বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন থাকায় ভাঙ্গা গোলচত্বরের সেই জৌলুশ আর নেই। স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা আসলেও সন্ধ্যা নামার আগেই স্থান ত্যাগ করেন।

ফরিদপুর সদরের বাসিন্দা রাকিবুল হাসান টোকন বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু। যা সারা দেশের মধ্যে অত্যাধুনিক স্বপ্নের প্রকল্প। এই প্রকল্প অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকাটা খুবই কষ্টের ও দুঃখজনক। জরুরি ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবেন ও সমাধান করবেন বলে আমাদের সাধারণ মানুষের দাবি।

এ বিষয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) ভাঙ্গার আবাসিক প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (মুন্সীগঞ্জ) কাছে বিদ্যুৎ বিলের প্রায় ৩১ লাখ টাকা বিল বকেয়া পড়েছে। বকেয়া বিলের টাকা পরিশোধের জন্য একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। বিল পরিশোধ না করায় বাধ্য হয়ে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বকেয়া বিল পরিশোধ করা হলে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথের (শ্রীনগর-মুন্সীগঞ্জ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ইন্টারচেঞ্জে অনেক টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ একাধিকবার অবহিত করেছে। কিন্তু কী করবো, এতে টাকা বিল পরিশোধের জন্য ফান্ডে টাকা নেই।

এছাড়া ওই এলাকায় বিদ্যুতের মিটার চুরি হয়ে যায়। ফান্ডের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। বিল পরিশোধ করলে বিদ্যুৎ চালু হবে। তবে কবে নাগাদ বিল পরিশোধ কিংবা বিদ্যুৎ চালু সম্ভব হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। ২৩ জেলার প্রবেশদ্বার। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সচল থাকা খুবই জরুরি। ঈদের আগে ও পরে ছোটখাটো কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এটা ঠিক। তবে এলাকায় প্রতিনিয়ত পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন রুবেল বলেন, বিষয়টি জানার পর আমার পক্ষ থেকে যা করণীয় তার চেষ্টা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে শিগগিরই বিষয়টি অবগত করা হবে।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ২২, ২০২৩)