দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : একটানা তিন দিন ধরে উড়ছে জাতীয় পতাকা ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাতেও জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। এ ঘটনায় সচেতন মহলের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

শুক্রবার (২১ জুলাই) রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয় ও সাধারণ পথচারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভবনে পতাকা উড়তে দেখেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সকাল ৭টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সারাদিন সারারাত ধরে জাতীয় পতাকা উড়তে থাকে। শনিবার সারাদিন সেই পতাকা উড়ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ফরিদপুর জেলার সভাপতি শেখ ফয়েজ আহমেদ বলেন, আমার একজন স্বজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। শুক্রবার রাতে তাকে দেখে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় ফিরছিলাম। এ সময় হঠাৎ চোখে পড়ে জাতীয় পতাকা উড়ছে। বিষয়টি দেখে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে খুব খারাপ লাগলো। এটা চরম অবহেলা।

এ সময় কর্তৃপক্ষকে জানানোর চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এভাবে সকালেও জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। আর নামানো হয়নি বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী স্বপন বলেন, পতাকা উত্তোলন ও নামানোর দায়িত্ব ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমানের। বিষয়টি তিনি ভালো বলতে পারবেন।

ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিষয়টি ভালো জানা নেই। ওইদিন (বৃহস্পতিবার) পতাকা উত্তোলনের দায়িত্ব ছিল সজিব মোল্লার। তিনি এ বিষয়ে বলতে পারবেন।

হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড মো. সজিব মোল্লা বলেন, বুধবার রাতে নাইট ডিউটি শেষে বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে আমি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে চলে যাই। সন্ধ্যার আগে পতাকা নামানোর দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা প্রহরী গেলাম সরোয়ারের। তিনি সম্ভবত পতাকা আর নামাননি। যার কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টানা শনিবার পর্যন্ত পতাকা উড়ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী ও পতাকা নামানোর দায়িত্বে থাকা গোলাম সরোয়ার বলেন, আমার ভুল হয়েছে, আমার অন্যায় হয়েছে। আর হবে না। আমাকে ক্ষমা করে দেন।

ফরিদপুর নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কান্তি বালা বলেন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও নামানোর রাষ্ট্রীয় নীতিমালা রয়েছে। দুই-তিন দিন ধরে একটানা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে রাখা চরম অবহেলা-গাফিলতি। চরম অবমাননার শামিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, বিষয়টি জানা নেই। যদি এমনটি হয় তাহলে এটা চরম দায়িত্বে অবহেলা। অবমাননার শামিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এনামুল হক বলেন, আসলে আমার বিষয়টি জানা নেই। এখনই এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, এটা করার কথা নয়। অবশ্যই এটা দায়িত্বে চরম অবহেলা। হাসপাতালের পরিচালকের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ২২, ২০২৩)