মোহাম্মদ ইলিয়াছ


ভয় শব্দটি আমার অভিধানে নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে বিরোধী দলের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভয় পেলে আমি এই অভিযানে নামতাম না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব কথা শুনলে রাষ্ট্র চালাবো কখন। ভয় শব্দটা আমার অভিধানে নেই। আমি যখন এ দেশে পা দিয়েছি তখন আমি ভেবেছি আমার পরিবারের হত্যাকারীরা এ দেশের ভালো ভালো যায়গায় আছে। আমাকে যে কোনো সময় হত্যা করতে পারে। আর সব ভেবেই আমি এ পর্যন্ত এসেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, সকল জনগণ আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। আমরা দেশ চালাতে এসেছি। আমরা কাউকে ধরে কারো থেকে কমিশন আদায় করি না।

শেখ হাসিনা একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন— ‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, শিশু ছোটভাই রাসেলসহ আপনজনদের হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাঁদের ফিরে পেতে চাই।’

বঙ্গবন্ধু যেমন তার সময়ের অন্যসব রাজনীতিকদের ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন, শেখ হাসিনাও তেমনি তার সময়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। কাজটি অবশ্যই সহজ ছিল না। ঘরে-বাইরে বৈরিতা ছিল এবং আছে। সব মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার এক বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এখন শেখ হাসিনার।

একজন অলস মানুষ হিসাবে, তার রুমকে ডাকা হতো আলসে খানা নামে, সেই হাসিনা এখন ভয় কে জয় করে দিন-রাত এক করে পরিশ্রম করেন কেবল দেশের কাজে। ব্যক্তিগত বলে এখন তার আর কিছুই নেই। আরাম-আয়েশ, সুখের জীবনকে ত্যাগ করে তিনি হাতে তুলে নিয়েছেন নিজের দলকে বাঁচানোর দায়িত্ব। যার মাধ্যমে আজ তিনি এই বাংলাদেশের একমাত্র ত্রাণকর্তাও বটে। একজন শেখ মুজিবের শূন্যস্থান যেন তিনি পূরণ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বঙ্গবন্ধু যেমন নিপীড়িত, দুঃখী মানুষের আশ্রয়স্থল ছিলেন, শেখ হাসিনাও আজ সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছেন। কতটা ত্যাগ, সংগ্রাম, লড়াই, পরিশ্রম করে একজন সফল রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।

একজন শেখ হাসিনাকে যেন আমরা নিজের মতো করে ধারণ করতে পারি, তার কষ্টকে নিজের মধ্যে নিয়ে বুঝতে শিখতে পারি, তিনি কেন জীবনের বিনিময়ে টেনে নিয়ে চলেছেন এই ভাঙাচোরা দেশটিকে। যুগে যুগে শেখ হাসিনার মতো মানুষ জন্ম নিক, তবেই দায়মুক্ত হবে এই দেশ এই মাটি।

দীর্ঘ ছয় বছর যন্ত্রণাদগ্ধ প্রবাসী জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। আমরা কি এখন ভাবতে পারি- শেখ হাসিনা কত দুঃখ-কষ্ট এক জীবনে পেয়েছেন। আজ পৃথিবীর সর্বত্র শেখ হাসিনাকে নিয়ে আলোচনা হয়। এটা একদিনে হয়নি। তিনি অনেক কারণে বাঙালি জীবনে জরুরি; জরুরি থাকবেন। সৃষ্টিশীলতা তাকে অমরত্ব দান করবে। এটাও তিনি অসম্ভব পরিশ্রম করে অর্জন করেছেন। রাজনীতিতে তার নিত্য যাওয়া আসা ছিল। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের আগাম বার্তা ছিল না। কিন্তু চলার পথ ছিল ‘দুর্গমগিরি কান্তার মরু’ পথের মতো । শুধু দেশের মানুষের উন্নয়নের ভাবনায় তুফান ভারি পথে পাড়ি দিয়েছেন । অনেক আপন ছেড়ে গিয়েছেন কিন্তু ভাবনা করেননি । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা’, বলিষ্ঠ একজন সমাজ সংস্কারক।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। এছাড়াও, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য।
এই মহান নেত্রীর বুকজুড়ে বাবা-মাসহ নিষ্পাপ কনিষ্ঠ ভাই রাসেলের নির্মম হত্যাকান্ডের করুণ স্মৃতি, দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীদের অব্যাহত ষড়যন্ত্র ও তাঁকে বারবার হত্যার অপচেষ্টা এ সবকিছু মাথায় নিয়েই মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর চেতনার অতুলনীয় উদাহরণে ঋদ্ধ।

জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের পথে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী নেত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালির কাছে আজ এক সাহসী ঠিকানা। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার জন্মে লুকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা-দেশবাসীর ধ্যান-ধারণা ও প্রত্যাশা-প্রাপ্তির যথার্থ প্রতিশ্রুতি। আজকের এই দিনে মহান স্রষ্টার কাছে এই প্রাণপ্রিয় নেত্রীর ঝুঁকিমুক্ত-নির্ভয়-নির্ভার নিরাপদ সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর বিনীত প্রার্থনা জানাচ্ছি। অজস্র মহিমায় আপনার জীবন কল্যাণময় হোক।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।