মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী : পদ্মা গড়াই হড়াই চত্রা আর কুমার নদী বেষ্টিত জেলা রাজবাড়ী।প্রতিবছর এই সময় বর্ষার পানিতে খাল-বিল, নদী-নালা ও নিচু জমি পানিতে ভরে ওঠে। তবে এ বছর সেই দৃশ্য নেই। নদ-নদীতে পানির সামান্য প্রবাহ থাকলেও খাল-বিল একেবারেই পানিহীন ‘মরুভূমি’। যে কারণে চলতি মৌসুমে সোনালী আঁশ পাট পঁচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষিরা।

পানির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে একদিকে মরে যাচ্ছে পাটের গাছ। সেই সাথে মরে যাচ্ছে কৃষকদের সোনালী স্বপ্ন। শেষমেষ কোনো উপায় না পেয়ে অনেক কৃষকরা বাড়ির আঙ্গিনা ও সামনেই মাটি খুঁড়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।

রবিবার সকালে সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়,পানির অভাবে শুকনো জায়গা গর্ত করে পাট জাগ দেয়ার ব্যবস্থা করছেন কৃষকেরা। অনেকেই আবার পুকুরে শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে সেখানে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে কৃষকদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।

জেলার পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া চত্রা নদীর পানিতে দেখা যায় ২-ইঞ্চি পরিমাণ পাট পচনের ময়লার স্তর। কৃষক বাচ্চু মন্ডল বলেন, চত্রা নদীর পানি এতটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে যে, পাট জাগ দিতে গিয়ে আমার শরীরে পচন (ঘা) শুরু হয়ে গেছে। যার কারণে দুই সপ্তাহ ধরে পানিতে নামতে পারছি না।

আমির হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, পানির অভাবে পাট কাটতে পারছি না। রোদে পুড়ে লালচে হয়ে ক্ষেতেই পাট মরে যাচ্ছে। জমির পাট কাটতে গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ খরচও গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাট নিয়ে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চরপাতুড়িয়া গ্রামের পাটচাষি মো: মুন্নাফ বলেন, চলতি মৌসুমে আমাদের হাহাকার দশা। অনাবৃষ্টি আর নদ-নদীর অব্যবস্থাপনার কারণে চরম পানি সংকটে পড়েছি আমরা। ফলে কিছুটা রেটিং পদ্ধতিতে পানির অভাবে মাটি খুঁড়ে গর্ত করে পাট জাগ দিচ্ছি।

একাধিক কৃষকরা জানিয়েছেন, বালিয়াকান্দির নারুয়া বাজার সুইচ গেইট খুলে দিলেই চত্রা নদী ও খাল-বিল পানিতে ভরে যাবে। এতে তাদের পানির অভাব পুরণ হতে পারে। তাই দ্রুত সুইচ গেইট খুলে দেয়ার দাবি জানান তারা।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল কালম আজাদ বলেন,জেলার ৫ টি উপজেলায় চলতি মৌসুমী ৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ২ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। তবে পানি সংকটে কৃষকদের পাট পঁচানোর জন্য বেগ পোহাতে হচ্ছে। তবে ডোবা, খাল-বিল, পুকুরে মাটির উপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে পাটের জাগ দিচ্ছেন অনেকেই। এতে পাটের মানের ক্ষতি হয় না, তবে খরচ কিছুটা বেশি হয়। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি যাতে এই মৌসুমী নদী নালা খাল-বিল পর্যাপ্ত পানি থাকে এজন্য সুইস গেট খুলে রাখতে।

(এমজি/এসপি/জুলাই ২৩, ২০২৩)