বিশেষ প্রতিনিধি, মাদারীপুর : মাদারীপুর সদর উপজেলার শিড়খাড়া ইউনিয়নের চর ঘুনসি এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদে প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। এতে করে পাড়ের পাশে থাকা ৩ শতাধিক পরিবারসহ আশে-পাশের প্রায় ১ হাজার পরিবার হুমকির মধ্যে আছে। 

স্থানীয়দের দাবী, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে নদ থেকে বালু তোলার জন্যই এই ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পাড়ের মানুষ। এছাড়াও তারা স্থায়ী বাধের দাবী জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিড়খাড়া ইউনিয়নের চর ঘুনসি এলাকার আড়িয়াল খা নদের পাড়ে ৩ শতাধিক পরিবার ভাঙ্গণ আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়াও এর আশে-পাশের প্রায় এক হাজার পরিবারের মানুষজনও ভয় ও আতংকের মধ্যে আছেন। যে কোন সময় আড়িয়াল খা নদের গর্ভে চলে যেতে পারে তাদের ঘরবাড়ি। তাহলে এই পরিবারগুলোর মাথা গোজার ঠাই হারিয়ে পথে বসে যেতে হবে। গত কয়েক বছরের ভাঙ্গণে অনেকগুলো পরিবার তিন দফায় ঘরবাড়ি সরিয়েছেন। বর্তমানে তাদের ঘর সরানোর আর জায়গা নেই। এবার ভাঙ্গলে তাদের রাস্তায় থাকতে হবে। এছাড়াও চরঘুনসি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও হুমকির মধ্যে আছে। তাই এখানকার মানুষ একটি স্থায়ীবাধ নির্মাণের দাবী তুলেছেন। তাছাড়া তারা এই এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবীও জানিয়েছেন।

স্থানীয় ইউনুস মুন্সি বলেন, সাত-আট বছর ধরে আমাদের এখানে নদী ভাঙ্গছে। এরিমধ্যে আমরা তিনবার ঘরবাড়ি সরিয়েছি। আমাদের ফসলি জমিও নদীর মধ্যে। এখন যদি এই ঘরবাড়ি ভাঙ্গে, তাহলে আমাদের আর থাকার জায়গা থাকবে না। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাই যাতে করে এখানে একটি স্থায়ীবাধ নির্মাণ করে দেন।

স্থানীয় পান্নু মুন্সি বলেন, এখানে নদীতে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার জন্যই আজ আমরা হুমকির মধ্যে আছি। মাঝেমধ্যে উপজেলা থেকে লোকজন এসে ছবি তুলে নেয়। কিন্তু কিছুই হয়না। বর্ষা এলে কিছু জিও ব্যাগ ফেলেন। কিন্তু স্থায়ী বাধ দেননা। এখানে জরুরিভাবে বাধ দরকার। পাশাপাশি ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটাও বন্ধ করতে হবে।

স্থানীয় মো. রেজাউল বলেন, এখানে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনসহ আমাদের এমপি মহোদয়ও এখানে এসেছিলেন। তারা এসে বলেন এখানকার নদী থেকে কোন বালু তোলা হবে না। এই এলাকাটিকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। কিন্তু পরে আর কোন কাজ হয়না। তারা চলে গেলেই আবার বালু কাটা শুরু হয়। তাই আমরা হুমকির মধ্যে আছি। তাছাড়া বর্ষা এলে কিছু জিও ব্যাগ ফেলেন তাও নদে চলে যায়।

স্থানীয় মো. মিন্টু বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এখানে আমরা বসবাস করছি। কিন্তু অনেকেই রাতের আধারে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে। এতে করেই ভাঙ্গণের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে বার বার বললেও ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা বন্ধ হয়নি। তাই সবার কাছে দাবী, এখানে একটি বেড়িবাধ নির্মাণসহ ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা বন্ধ করা হোক।

স্থানীয় আলমগীর হোসেন স্ত্রী ডলি বেগম বলেন, নদের পাড়ে প্রায় তিন শতাধিক মানুষের বসবাস। সবাই হুমকির মধ্যে আছে। যে কোন সময় নদী গর্ভে চলে যেতে পারেন আমাদের ঘর-বাড়ি। তখন আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।

স্থানীয় ছালাম হাওলাদারের স্ত্রী লালমনি বলেন, এখানে অবৈধভাবে বালু তোলার জন্যই এই অবস্থা। চেয়ারম্যানকে বললে তিনি বলেন যারা বালু কাটেন তাদের সবাই মিলে ধাওয়ান। কিন্তু যারা বালু তোলেন, তারা আমাদের কথা শোনেনা। তারা তাদের ইচ্ছেমতো বালু তোলেন।

স্থানীয় শাহলম মুন্সি বলেন, আমরা চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। তারা বলেন আমাদের মানা করা আছে, কেউ বালু কাটবে না। কিন্তু তবুও নদী থেকে বালু তোলা হয়।

মাদারীপুরের শিড়খারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে। এমনকি আমাদের এমপি মহোদয়ের সাথেও কথা হয়েছে। এমপি ঐ এলাকা পরিদর্শনও করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি ভাঙ্গণ রোধের জন্য একটি স্থায়ী বাধ নির্মাণের।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল কাদের খান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করবো। এরপর জরুরি বরাদ্দ আসলে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হবে। তাছাড়া এখানে স্থায়ী বাধ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এটা করতে বড় অংকের খরচ হবে। তাই আমরা একটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাবো। সেটা অনুমোদন পেলে আমরা ঐখানে একটি স্থায়ী বাধ নিমার্ণ করতে পারবো। সেটা সময়ের ব্যাপার। তাই প্রাথমিকভাবে জরুরি বরাদ্দ পেলে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাইনউদ্দিন বলেন, আমরা খুব দ্রুত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধসহ এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

(এএসএ/এসপি/জুলাই ২৩, ২০২৩)