স্টাফ রিপোর্টার : দেশের চলমান ডলার সংকটের মধ্যে ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। সদ্যসমাপ্ত জুন মাসের মতোই ইতিবাচক ধারা রয়েছে জুলাই মাসেও। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা তাদের রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রাখলে জুলাই শেষে দুই বিলিয়ন (২.১০ বিলিয়ন ডলার) ডলার ছাড়িয়ে যাবে- এমন আশা সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি মাস জুলাইয়ের প্রথম ২১ দিনে ১৪২ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার (১৪২৬.৩১ মিলিয়ন ডলার) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) এর পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার ৪৭৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর প্রতিদিন আসছে ৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার বা প্রায় ৭৩৭ কোটি টাকার বেশি।

আলোচিত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৯ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার। প্রবাসী আয় আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে দুই বিলিয়ন ডলার বা ২১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের বাইরে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি নতুন করে গেছেন। এখন সবাই বৈধপথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকিং চ্যানেল নিরাপদ হওয়ায় এটাকে বেছে নিচ্ছেন তারা। এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাই মাসেও দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

অপরদিকে আলোচিত মাসে এখন পর্যন্ত ৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল কামর্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্থান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

এর আগেন সদ্যসমাপ্ত জুন মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে এটি প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ছিল। এর আগে সবশেষ গত ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার এসেছিল। আর বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।

সদ্যবিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার এসেছিল। টানা পাঁচ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে আর যেতে পারেনি। অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে আসে ১৫৪ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার আসে। মার্চ এসেছিল ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ এবং মে মাসে ১৬৯ কোটি ডলার আসে। সবশেষ ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জুন মাসে আসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

(ওএস/এএস/জুলাই ২৩, ২০২৩)