ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের রেলক্রসিংগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। অরক্ষিত এসব ক্রসিংয়ে নেই গেটম্যান ও গেট বেরিয়ার। নেই ডিভাইস পদ্ধতির সিগন্যাল সিস্টেমও। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিযে এসব ক্রসিং পার হচ্ছে শত শত মানুষ ও যানবাহন।

ময়মনসিংহ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, অননুমোদিত লেবেল ক্রসিংয়ের মধ্যে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এবং মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে তৈরি করেছে এসব লেবেল ক্রসিং।
একই সূত্রমতে, ময়মনসিংহ-ঢাকা, ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা-মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহ-জামালপুর রুটের বিদ্যাগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথের মোট ২০২ কিলোমিটার ময়মনসিংহ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এসব রুটে রেলের মোট লেভেল ক্রসিং সংখ্যা ২০৫টি। যার মধ্যে অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং মাত্র ৬৫টি। এর বাইরে অননুমোদিত ক্রসিং ১৪০টি। অনুমোদিত ৬৫টি ক্রসিং এর মধ্যে গেটম্যান ও গেট বেরিয়ার আছে মাত্র ৪৮টিতে। বাদ বাকি ১৫৭ টিতে গেটম্যান ও বেরিয়ার নেই।
সূত্র জানায়, কোন রেল লাইন স্থাপনের ১০ বছরের মধ্যে কোথাও কোন লেবেল ক্রসিং নির্মাণের দরকার হলে তা রেলের নিজস্ব অর্থায়নে করে দেয়া হয়। এ সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পর সরকারের অন্য কোন বিভাগের সড়ক নির্মাণের কারণে লেবেল ক্রসিংয়ের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজ খরচে তা নির্মাণ করতে হবে।

কিন্তু রেল লাইনের ওপর দিয়ে সরকারের অন্য বিভিন্ন বিভাগ থেকে রাস্তা করা হলেও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমনকি তাদের তরফ থেকে করে দেয়া হয়নি কোন ওয়ার্নিং বোর্ডও।
ময়মনসিংহ রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবরার হোসেন বলেন, অবৈধ রেলক্রসিংগুলোই মৃত্যুফাঁদ। এসব ক্রসিংয়ে আমরা লোকজনের চলাচলের অনুমতি দেইনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও লোকজন বা বিভিন্ন বিভাগ নিজেদের প্রয়োজনেই এসব স্থানে ক্রসিং তৈরি করেছে।
রেলের নিয়ম অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলোতে ৬ জন করে নিরাপত্তা প্রহরীকে ডে-নাইট দায়িত্ব পালন করতে হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংয়ে ৩ জন করে এবং ছোট ক্রসিংগুলোতে কমপক্ষে একজন করে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই। এর মূলে রয়েছে পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে।
শহরের বাঘমারা মেডিকেল রেলগেট কম গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখানে কাগজে-পত্রে ৩ জন নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও মাঝেমধ্যে গিয়ে পাওয়া যায় মাত্র একজন।
রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজকীয় বাহনের নাম রেল। রেললাইনে এসে রেলের নিয়ম মানতেই হবে। নয়তো এর সামনে যা পড়বে, তাই চুরমার করে নিয়ে যাবে। স্বভাবতই অবৈধ ক্রসিংগুলোতে রেলের কোন স্টাফ থাকার কথা নয়। এ পথ যারা ব্যবহার করবেন তারা সতর্ক না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবেই।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আবু তাহের বলেন, ময়মনসিংহ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ১০টি আন্তনগর, ৬টি কমিউটার ট্রেন, ৫ জোড়া মেইল ট্রেন, এক জোড়া ডেমু ট্রেন ও ১১ জোড়া সাধারণ ট্রেন আসা-যাওয়া করে। এছাড়া মালবাহীন ট্রেন তো রয়েছেই।
তিনি বলেন, আমার অধীনে ৫ টি রেলক্রসিং এ গেটম্যান ও গেট বেরিয়ার আছে।
(এসইএস/এএস/এপ্রিল ৩০, ২০১৪)