মাণিক চন্দ্র দে


আমেরিকা, কানাডার মতো উন্নত দেশগুলোতে যারা ভাল বেতনে চাকরি বাকরি করে বা ভালো ব্যবসাপাতি করে তাদের   মাসে বিভিন্ন ধরনের  সরকার / সংস্হাকে  অনেক টাকার ট্যাক্স দিতে দিতে মাস শেষে হাতে কোন সঞ্চয়ই থাকে না। থাকার দরকারই বা কী!  যেখানে বেকার থাকলে বা বুড়ো হয়ে গেলে সরকার চালাবে! 

আর ভোক্তাদের তো প্রতিদিনই তাদের সকল পণ্য কেনাকাটাতে বাধ্যতামূলকভাবে ট্যাক্স দিতে হয়। এই ট্যাক্স কোন কোন জায়গায় ১৫%, কোথায় কিছু কমবেশি রয়েছে। একটা চিপসের প্যাকেট বা একটা চকলেট কিনলেও এর থেকে মুক্তি নেই। আর যাদের গাড়ি আছে তাদের তো ইনস্যুরেন্স / ফিটনেস বাবদ মাসে মাসে স্হানভেদে দুশো থেকে চারশো ডলার পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হয়।

ডমেস্টিক ফ্লাইটে দেশের কোথাও যেতে হলে টিকেট বাবদ যদি আশি ডলার লাগে, তাহলে এয়ারপোর্ট ফি, প্রভিন্সিয়াল ফি, কান্ট্রি ফি ইত্যাদি মিলিয়ে আরোও দুই, আড়াইশো ডলার যোগ হয়ে টিকেটের গ্রাণ্ড টোটাল হয়ে দাঁড়ায় তিনশো, সাড়ে তিনশো ডলার। লক্ষণীয় যে সরকার কিন্তু রাজস্ব বাড়াচ্ছে প্রধানত সামাজিকভাবে সচ্ছল নাগরিকদের কাছ থেকে। কোন গরীব ও অসহায়দের কাছ থেকে নয়। এখানে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সব কিছু ডিজিটাল শৃঙ্খলে আবদ্ধ।

আর আমাদের দেশে তো বড় লোকেরা বা শিল্পপতিদের বড় বড় আয়কর ফার্ম রয়েছে যারা তাদের এসব ক্লায়েন্টদের পথ বাতলে দেন কিভাবে সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া যায়, বিনিময়ে নিজেরাও লাভবান হন। কিছু ট্যাক্স সঠিকভাবে দেয় মূলত মধ্যবিত্তরা। আর ট্যাক্সের আওতাবহির্ভূত তো বিরাটসংখ্যক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী রয়েছেনই। যা আদায় করতে পারলে সরকারের অভ্যন্তরীন রাজস্ব সংগ্রহ বহুগুনে বেড়ে যেত। উন্নত দেশগুলো এসব অর্থ গ্রাহক থেকে নিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের দেশের শিশু, বৃদ্ধ, দরিদ্র, অসহায় বা অন্য দেশ থেকে আনা রিফিউজিদের কল্যাণে ব্যয় করে, প্রতিষ্ঠানের বা রাস্তাঘাট/ স্হাপনার উন্নয়ন, সংস্কার বা নতুনভাবে তৈরি করে।

মোটামুটি এতে পাবলিক ও গভর্ণমেন্ট সবাই সন্তুষ্ট। তবে যারা বেশি বেতনে চাকরি বা আয় রোজগার করে তাদের থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ডলার কেটে নেওয়া হয় বলে ওরা একটু অসুখী বা সরকারের উপর একটু অসন্তুষ্ট। তারা ভাবে, আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে অন্যদেশের রিফিউজি বা কর্মহীন/ অলস মানুষকে কেন দেওয়া হবে? কিন্তু কেউ এই অভিযোগ করে না যা সরকারি লোকজন বা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব অর্থ মেরে খায়। সব আয়ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ যেমন হিসাব আছে তেমনি আছে জবাবদিহিতা। তাই দিনশেষে সবাই মোটামুটি খুশি।

অবশ্য এর পেছনে কাজ করে দেশপ্রেম, সততা, নিষ্ঠা ও কঠোর জবাবদিহিতা, আন্তরিকতা এবং সেবার মনোভাব। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভূটানের মতো ছোট ছোট ও একসময়ের গরীব এবং অনুন্নত এশিয়ার দেশগুলো এভাবেই তাদের দেশকে উন্নত করে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তাদের সকলের কাছ থেকে আমাদের দেশের অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব।