চাঁদপুর প্রতিনিধি : আজ ৩০ এপ্রিল থেকে উঠে যাচ্ছে মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমের নিষেধাজ্ঞা। স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলে পরিবারে। ১ মে থেকে পুনরায় নদীতে মাছ ধরতে পারবে। তবে অভয়াশ্রমের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও জাটকা রক্ষায় ৩০ জুন পর্যন্ত প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। এ সময়ের মধ্যে ১০ ইঞ্চির নিচে ইলিশ শিকার, কারেন্ট জাল ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। পাশাপাশি বাধা জালের উপর এবং ছাই দ্বারা পাংগাসের পোনা নিধন বন্ধ অভিযান চলবে। সরকার জাতীয় মৎস সম্পদ ইলিশ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও চাঁদপুরসহ দেশের তিনটি নদী অঞ্চলকে জাটকা রক্ষা কর্মসূচির আওতায় নদী এলাকায় অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে।

এ কারণে মার্চ-এপ্রিল এ দু’মাস সাধারণ জেলেদের জন্য মাছ ধরা বন্ধ ছিলো। নিষেধাজ্ঞার সময়ে কর্মসূচি সফল করার জন্য প্রশাসনের জোরালো অভিযান যেমন পরিলক্ষিত হয়েছে। তেমনি নদীতে দেখা গেছে আবার ভিন্ন চিত্র। একদিকে প্রশাসনের জাটকা রক্ষার অ্যাকশন অপরদিকে অভয়াশ্রম এলাকায় এক শ্রেণীর জেলেদের জাটকা ও ইলিশ শিকার। আড়তদারি, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন সবই চলেছে। সরজমিনে মার্চ-এপ্রিল এ দু’ মাসের জন্য মেঘনা নদীতে অভিযান চলাকালীন দেখা যায়, প্রতিদিন মতলব উত্তর উপজেলা থেকে প্রায় শতাধিক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন ব্যবহার করে ঐ এলাকার জেলেরা নৌকা-জাল নিয়ে চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলা নদী এলাকায় নির্বিচারে জাটকা নিধন করেছে। শরীয়তপুর জেলার চরএলাকা এবং চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত চর এলাকা দিয়ে মেঘনার পশ্চিম পাড়ে বিপুল পরিমাণ জাটকা নিধন করেছে এবং ইলিশও শিকার করা হয়। সদর উপজেলার আনন্দ বাজার রাজরাজেস্বর চর, চাঁদপুর শহর এলাকার বড় স্টেশন যমুনার রোড, পুরাণবাজার রনাগোয়াল, বাবুর্চি ঘাট, সাখুয়া স্লুইচ গেট খালের মুখ, বহরিয়া মাছ ঘাট, লোদের পাড়, পুরাতন গুচ্ছ গ্রাম, হরিণা ঘাট, রাড়ি কান্দি, নন্দিগো দোকান, আখনের হাট, ইব্রাহিমপুর, ঈদগাহ বাজার, আলু বাজার, এলাকায় জাটকা নিধন ব্যাপক হয়েছে। হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদী জুড়ে ব্যাপক জাটকা নিধন করা হয় এবং ইলিশও শিকার হয়েছে। উল্লেখিত এলাকায় জাটকার পাইকারী ভাসমান আড়ৎ নদীর পাড়েই ছিল। সেখান থেকে ড্রামে ড্রামে, ঝুড়ি, প্লাস্টিক বস্তা এমনকি বিভিন্ন পাত্রে বিপুল পরিমান জাটকা বিভিন্ন স্থানে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য চালান হয়েছে। নদীর পাড়ের চিহ্নিত মাছের আড়তগুলোতে প্রতিদিনিই সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত জমজমাট ইলিশের আড়তদারি করতে দেখা যায়। চাঁদপুর থেকে জাটকা ও বিভিন্ন সাইজের শ’ শ’ মন ইলিশ-জাটকা স্পীট বোর্ডযোগে রাতের অন্ধকারে মাওয়া, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় চালানি হয়। শরীয়তপুর জেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া চেয়ারম্যান স্টেশন এলাকায় ইলিশ ও জাটকার রমরমা বিচরণ প্রকাশ্যেই হয়েছে। এবার বিপুল পরিমাণ জাটকা নিধন হওয়ায় ইলিশ মৌসুমে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

এদিকে অভিযানের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যরা এ সুযোগে ইলিশ আটক করে আটক বাণিজ্য করতেও দেখেছ অনেকে। এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। সরকার ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে জাটকা জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে খাদ্য সহায়তা সময় মতো ও দিয়েছে। জাটকা ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে এ বছর জন্য প্রত্যেক জেলের জন্য জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়। মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন ৩০ তারিখ পর্যন্ত জেলেরা ওই চাল পাচ্ছে এবং পাবে। চাঁদপুর জেলার ২৮ হাজার ৫৬জন তালিকাভুক্ত এলে (ভিজিএফ কার্ডধারী) সরকারের চার দফা এ খাদ্য সহায়তার সুফল পাচ্ছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জাটকা মত্তসুমে চাঁদপুর মেঘনা অঞ্চলে ব্যাপক জাটকা নিধন হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইলিশ শিকার ও আড়তদারি হয়েছে। জাটকা রক্ষায় গঠিত জেলা টাস্ক ফোর্স প্রধান ও জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন এবার জাটকা রক্ষায় তারা ৯০ থেকে ৯৫% সফল হয়েছে। গত দু’ মাসে জেলা টাস্ক কোর্স ২ শতাধিক অভিযান পরিচালনা করে। ৩৪২ জন জেলেকে জাটকা ধরার অপরাধে সাজা দেয়া হয় এবং কয়েক লাখ টাকা জরিমানা অর্থ আদায় করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আশা করেন, ইলিশ মত্তসুমে এবার ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। প্রশাসনের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা থাকায় জাটকা রক্ষা কর্মসূচি হাইমচরসহ কিছু কিছু জায়গায় ব্যাহত হয়েছে। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমান জানান, জাটকা ও কিশোর ইলিশ (১০ ইঞ্চির নিচে) মাছ নিধন বন্ধে এবং কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে নদীতে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ অভিযান চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। চাই দিয়ে পাঙ্গাস পোনা নিধন এবং বাধা জালের ব্যবহার ও নিষিদ্ধ থাকবে। তিনি আরো জানান ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড এবং মৎস্য বিভাগ চাঁদপুর যৌথভাবে ইলিশ সংরক্ষণে এবং জাটকা রক্ষায় এ যাবৎ ৩০ মেট্রিক টন জাটকা আটক করে সেগুলো গরিব-দুঃস্থদের মাঝে এবং এতিমখানা মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে। এ কোটি এক লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। জাটকা নিধনের সময় পরিচালিত অভিযানে ৩শ’ ৯৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২শ’ ২ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান এবং আড়াই লাখ টাকা জরিমানার অর্থ আদায় করা হয়। জেলেরা তাদের সরকারি খাদ্য সহায়তা হিসেবে জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ৪০ কেজি করে চাল পাবে।
(এমজে/এএস/এপ্রিল ৩০, ২০১৪)