চৌধুরী আবদুল হান্নান


বঙ্গবন্ধু আজ নেই কিন্ত তাঁর মানবতাবোধ, অসাম্প্রদায়িক নীতি-আদর্শ আমাদের আলো দিয়ে যাচ্ছে। এক মহামানব এসেছিলেন আর এসে আমাদের উপহার দিলেন স্বাধীনতা, বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন দেশ। স্বাধীন দেশের নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার স্বাদ, মাধুর্য কত তা বুঝে ওঠার আগেই স্বাধীনতা এনে দিলেন বঙ্গবন্ধু, শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তানের শোষণ, দুঃশাসন থেকে উদ্ধারকরেছিলেন বাঙালি জাতিকে।

বাঙালির ভালোবাসার সর্বোচ্চ শিখরে পৌছেছিলেন তিনি, পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন দেশে পদার্পণ করে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম ভাষণে কেঁদেছিল সকল বাঙালি, মৃত্যুর দুয়ার থেকে বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে হৃদয়-মন উজাড় করে ভালোবাসার ক্রন্দন প্রকাশ করেছিল সেদিন। নিভৃত পল্লীতেও রেডিওর চতুর্দিকে গোল হয়ে বসে শত মানুষের ফুঁরিয়ে কান্নার অভূতপূর্ব দৃশ্য যে স্বচক্ষে দেখেনি, তাকে বিশ্বাস করানো যাবে না।

একজন নেতার জন্য ভালোবাসার এমন কান্না কেউ দেখেনি আগে। সেদিন বাঙালি জাতি তাঁর প্রতি যে প্রাণঢালা ভালোবাসা দেখিয়েছিল তা পৃথবীর অন্য কোনো নেতা, রাষ্ট্র নায়ক পেয়েছেন কিনা সন্দেহ।

মাত্র ৫৫ বছর বয়সে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়ে জীবদ্ধশায় কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন তিনি, পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকার জন্য তাঁর আর কিছু করার প্রয়োজন হতো না। কিন্ত তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় বাঙালির ভালোবাসার মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্ত স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের মদদপুষ্ট হয়ে ঘাপটি মেরে থাকা ঘাতক দল তাঁকে বাঁচতে দেয়নি; ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করলো।অকৃতজ্ঞ জাতি!

ইতিহাস থেকে তাঁর অবদান মুছে ফেলারও চেষ্টা হয়েছে দীর্ঘ ২১ বছর। মহামানবের কীর্তি কখনও মুছে ফেলা যায় না; বরং সে কীর্তিগাঁথা কেবল আঁধার দূর করে আলো ছড়াতে থাকে।

বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নয়, তিনি সকলের, বাংলাদেশের জাতির পিতা। তিনি ছিলেন নির্ভিক মানুষ, ক্ষমাশীলতা ও উদারতার কোনো সীমা ছিল না তাঁর। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা কখনও ভাবতেন না, তাঁর লোকদের ওপর ছিল অগাধ বিশ্বাস। জীবন দিয়ে এ বিশ্বাসের মূল্যপরিশোধ করছেন তিনি।

তিনি সব সময় শোষণহীন, দারীদ্রমুক্ত একটি দেশের স্বপ্ন দেখতেন; ছাত্রজীবন থেকেই তিনি শোষিতমানুষের পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্হান নিয়েছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগাতে হবে।

বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, শেখ হাসিনার কাছে আমাদের বাড়তি প্রত্যাশা রয়েছে কারণ তিনি জাতির পিতার কন্যা। তাঁর সাফল্য অনেক, ব্যর্থতাও রয়েছে। যাঁর হারানোরকিছু নেই, সম্পদের লোভ নেই, তাঁর দেওয়ার ক্ষমতা বেশি।

সদা শত তোষামোদকারী আর সুযোগ সন্ধানী দ্বারা বেষ্টিত থেকেও তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন, এমন বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ইতোমধ্যে বর্তমান বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বর্তমানে দেশের উন্নতি যাদের চোখে পড়ে না তাদের অন্ধ বলা ছাড়া আর কী বলা যায় ? ‘৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাওয়া-পরা দিতে হিমশিম খেতে হতো কিন্ত বর্তমানে ১৮ কোটি লোকের ভার বহনকরার সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ছোট্ট এ দেশটি স্বল্প পরিসরে খাদ্য রপ্তানিও করে।

এক কোটির অধিক প্রবাসী বাঙালির প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রায় পূর্ণ হচ্ছে সরকারের অর্থভান্ডার। দেশের একমাত্র দুর্নীতিমুক্ত বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কৃষক শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সারা বছর ফসল উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন, শিক্ষিত শহুরে মানুষদের খাদ্যের জোগানদাতা তাঁরা। আর লক্ষ লক্ষ পোষাক শ্রমিক দেশের রপ্তানি খাতকে চাঙা করে রেখেছেন। দেশের অন্তত সম্ভাবনাময় এ তিনটি খাত সরকারের একটু বাড়তি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশ আরও উন্নতির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। ধীরে ধীরে বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে এক সময়ের অবহেলিত বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে মুগ্ধ চোখে দেখতেন তাঁর বাঙালি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতির পিতার পথ ও পাথেয় আমাদের বর্তমান এবং আগামীর দিক নির্দেশনা, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা; যা কখনও নির্বাপিত হবে না। ইতিহাসের প্রবাদ পুরুষ, স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্মৃতির প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।