মাগুরা প্রতিনিধি : সরকারের জলমহাল বন্দোবস্ত নীতিমালাকে উপেক্ষা করে  মাগুরার  শালিখা উপজেলার মধ্য দিয়ে  প্রবাহিত ফটকী নদী, বেগবতী, চিত্রানদী, কানুদার খাল, পাতের খালসহ অসংখ্য খাল বিলে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্যজীবি অবৈধভাবে আড়বাঁধ, বেড়জাল, নেট বা কারেন্ট জাল দিয়ে মৎস্য শিকার করায় নদীতে উৎপাদিত সকল প্রকার মাছ পোনাসহ নিধন হয়ে যাচ্ছে।

ফলে,ফটকীর দুই পাড়ের প্রায় সহস্রাধিক জেলে পরিবার এখন অসহায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সেই সাথে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায়ও চলে যাচেছ প্রকৃত মৎস্য জীবিগণ।

সম্প্রতি এলাকা ঘুরে জানাগেছে,এক কালের স্রোতস্বিনী নদী ফটকীর এখন মৃত অবস্হা । নদীর প্রবহমান যে অংশ টুকু এখনও সতেজ রয়েছে সেখানে আড়বাঁধ, বেড় জাল, কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরায় সকল প্রকার মাছের বংশ বিস্তারে বিঘ্নঘটছে।

ফলে কৈ,শিং,পুঁটি,টেংরা,মাগুর,পাবদা,বাইন,মলা,ঢেলা,রয়না,পাকাল,চাঁদা,শৈল,মায়া,র্ইু,কাতল সহ সকল প্রকার দেশী মাছের পোনা অংকুরেই বিনষ্ট হওয়ায় দিন-দিন এ সকল মাছ বিলুপ্তি হতে চলেছে।

যদিও নদীতে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় অভয়াশ্রম সথাপন করে প্রতি বছর মাছের পোনা অবমুক্ত করেই রাজ দায়িত্ব পালন করে থাকে মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

যার এক আনাও মৎস্য জীবিদের উপকারে আসে না। বরং লাভ করে থাকে আমলা ও দালালেরা । অন্য দিকে এক শ্রেণির অসাধু নামধারী মৎস্য শিকারীরা সরকারি আইন অমান্য করে গজ দূর্বা গ্রামের আইয়ুব হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওই গ্রামের পার্শ্ববর্তী ফটকী নদীতে দীর্ঘদিন যাবত আড়বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করে চলছে।

এ ব্যাপরে উপজেলা প্রশাসন ৩ বার অভিযান চালিয়ে বাঁধ অপসারন করলেও প্রভাবশালী আইয়ুব হোসেন পুরায় আড়বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করে চলছে। ফলে উপজেলা প্রশাসন নিরূপায় হয়ে পড়েছে। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তি আড়বাঁধের সাথে বহাল তবিয়তে নেট বা করেন্ট জাল দ্বারা অবাধে মাছ শিকার করায় ডিম ওয়ালা মাছ থেকে শুরু করে ছোট পোনা মাছ নিধন করে চলছে।

মুধু আইয়ুব হোসেনই নয় নদীতে প্রায় কয়েকশ অসাধু মৎস্য শিকারিরা নিয়মিত ভাবে নেট বা কারেন্টজাল, ছোট-ছোট আড়বাঁধ, ভেশাল জালসহ বিভিন্ন প্রকারের যন্ত্র ব্যবহার করছে যাহা মাছের বংশ বিস্তারে ক্ষতিকর। অথচ এ অঞ্চলে দেশীয় জাতের মাছ চাষের তেমন কোন উদ্যোগ না থাকায় নদী-নালা, খাল-বিল থেকে হারিয়ে যাচেছ এসব মাছ। চাহিদা বাড়লেও ক্রমেই কমে আসছে দেশী মাছের জোগান। বাজারে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ জাতীয় মাছ। চলতি বছরে মৎস্য সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে যে সকল মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে তা পানি নষ্টের কারণে মারা গেছে। আর অল্প কিছু মাছ জীবিত থাকলেও তা কারেন্ট জালে মারা পড়ে গেছে বলে এলাকার মৎস্য জীবিগণ জানান। তারা আরও জানান বর্তমানে নদী-নালা, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পরিমানে মাছ না থাকায় প্রকৃত মৎস্য জীবিগন এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচেছ।

উপজেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায় , মাগুরা-শালিখা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফটকী নদীর আয়তন ২২৮.৮২ বর্গ কি: মি:। এ ছাড়া শুধু শালিখা উপজেলার মোট পুকুরের সংখ্যা ৩৬৪৩ টি এবং এর জলায়তন ৩২৩.১৭ হে:। বিল ২৫টির জলায়তন ৯০.৫০হে:। মোট খাল ২০টি। যার জলায়তন ৩০৩ হে:। প্রতি বছরে ন্যায় চলতি বছরেও মৎস্য সম্প্রসারন অধিদপ্তর এ বৃহৎ জলাশয়ে মোট ২৫২৮ কেজি বিভিন্ন প্রকারের মাছের পোনা অবমুক্ত করেছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ গোলাম রসুল জানান, দেশী মাছ সংরক্ষণের জন্য কারেন্ট জালের ব্যবর্হা বনধ করা, মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা,অভ্যন্তরীণ ম্ক্তু জলাশয় সংরক্ষণ, সামাজিক সচেতনা বৃদিধসহ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করে চলছে। নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে দেশি মাছের আবাস সথল সংকুচিত হচেছ । খাল-বিলের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে খাল-বিলে আবাদ করা হচেছ। খাল-বিল সংরক্ষণ না করলে এক দিন এ এলাকা মৎস্য শূন্য হয়ে পড়বে। পরিসংখ্যান অনুযায়ি দেশের ২৬০টি প্রজাতির মিঠা পানির মাছের মধ্যে ১২টি জাত সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

প্রাকৃতিক জলাশয়,মুক্তজলাশয় অনৈতিক ব্যবহারের কারনে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ও বংশ বিস্তারে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে। কীটনাশক ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারও এর জন্য দায়ী। দেশী মাছ সংরক্ষণ করার জন্য মিনি পুকুর তৈরী করা, প্রজনন মৌসুমে মাছ না ধরা ও রুই জাতীয় মাছের সাথে দেশি জাতের মাছ চাষ করা জরুরি। তা না হলে একদিন দেশি জাতের মাছ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে।

(ডিসি/অক্টোবর৩১,২০১৪)