শিতাংশু গুহ


আসুন আমরা নিন্দা বাদ দিয়ে সবার প্রশংসা শুরু করি। সমালোচনা করে তো কিছু হচ্ছেনা, প্রশংসা করে দেখা যাক? আপনার সদিচ্ছা আছে, আপনি একজন যোগ্য নেতা চান, প্রশংসা করুন। প্রশংসা করতে পয়সা লাগেনা, ফ্রি, দেদার প্রশংসা করুন। আপনার প্রশংসা অন্যদের কাজে উৎসাহ জোগাতে পারে? এতে আপনি নিজেও লাভবান হবেন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আপনার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আপনি/আমি প্রশংসা করলেই কেউ নেতা হয়ে যাবেনা, যিনি নেতা হ’ন, তিনি আপন গুনেই নেতা হবেন। দেখবেন, অনেকে অভিযোগ করছে যে, সিনিয়ররা সরছেন না বলেই তাঁরা নেতা হতে পারছেন না? ওবামা সিনিয়রদের ধাক্কা মেরে নয়, সিনিয়রদের সাথে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হ’ন। ঋষি সুনাক যোগ্যতা দিয়ে সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। 

অযোগ্য, অকর্মন্য লোকই অন্যের সমালোচনা করে, যোগ্যরা কাজ করে এগিয়ে যায়। সমালোচনা হবে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের সমালোচনা আছে, আপনি/আমি তো কোন ছাড়! জানি, আপনার সদিচ্ছা আছে, আপনি চান আপনার পছন্দমত একজন যোগ্য নেতা? দশটি শেয়ালের নেতা যদি একটি সিংহ হয়, তখন শিয়ালগুলো সিংহের মত আচরণ করে? আপনি বাঘের মত গর্জে উঠুন, দেখবেন আপনার নেতাও সিংহের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে। আপনি নেতিবাচক ভূমিকা পালন করলে আপনার নেতাও ‘শিয়াল’-র মতোই হবে, তাই না? হিন্দু অন্য হিন্দু’র সমস্যা দেখলে পাশ কাটিয়ে যায়, অর্থাৎ নিজেকে হিন্দু হিসাবে পরিচয় দিতে চায়না, অথচ তিনি নিজে বিপদে পড়লে হিন্দু হিসাবেই সাহায্য চান! এমন ঘটনার অজস্র দৃষ্টান্ত আছে। রামু থেকে নাসিরনগর হয়ে কুমিল্লা ঘটনায় প্রমান হয়েছে অন্যদের কাছে আপনার আর্তি মূল্যহীন, তাই আপনাকে নিজস্ব সম্প্রদায়ের সাথেই মিলে মিশে থাকতে হবে, মরলে হিন্দু হিসাবেই মরতে হবে, বাঁচলে হিন্দু হয়েই বাঁচতে হবে।

বাংলাদেশের হিন্দু ভাবতে ভুলে গেছে তাঁরা ‘সূর্য সেন’র ভাই, প্রীতিলতা তাঁদের বোন, ক্ষুদিরাম, বিনয় -বাদল-দীনেশ-র উত্তরসূরী। হিন্দুর সব আছে, বিদ্যা আছে, বুদ্ধি আছে, অর্থবিত্ত আছে; বাংলার হিন্দু কাপুরুষ নয়, তাদের গৌরবময় ইতিহাস ছিলো, আছে। হাজার বছরের পরাধীনতার গ্লানি ধুয়ে-মুছে আবারো জেগে উঠতে হবে, গাইতে হবে ‘বিজয়ের গান’। কেউ হয়তো হিন্দুদের মধ্যে জাতপাত বিভক্তির কথা বলবে, বিভক্তি নেই কোথায়? বৈচিত্রের মাঝেই ঐক্য খুঁজে বের করতে হবে। হিন্দু এক গ্রূপ গিয়ে অন্য গ্রূপের ওপর বোমা মারেনা। ভাই-ভাই বিবাদ থাকে, হিন্দু বললেই যখন দুইভাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে যাবে, তখন সমস্যা থাকবে না।

সবাই বলেন, হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হলে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। কথাটা সত্য। কিন্তু ঐক্য কোথায় আছে? বেশিরভাগ মানুষ যখন একই সুরে কথা বলে, তখন ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়, সমস্যার সমাধান হয়। কাজেই ঐক্যের অজুহাত না দিয়ে ‘আপনার কাজটি আপনি করুন’, দেখবেন সমস্যা উড়ে গেছে। প্রসঙ্গ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের হিন্দু’র কথাই বলছি। ভারত ভাগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাঙ্গালী হিন্দু। বিশেষত: পূর্ব-বাংলার হিন্দু। বাংলাদেশের হিন্দু। পাঞ্জাবের মত বাংলায় ‘জনসংখ্যা বিনিময়’ হলে বাঙ্গালী হিন্দু বেঁচে যেতো। হয়নি, তাই পশ্চিমবাংলা এখন ভুগছে। বাংলাদেশের হিন্দু ভুগছে। জনসংখ্যা বিনিময় হলে হয়তো বাঙ্গালী মুসলমানও ভালো থাকতো। যা হয়নি, তা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই, বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের হিন্দু’র ভাল থাকার উপায় কি?

উপায় একটাই, উঠে দাঁড়াতে হবে। শিশু যে মাটিতে আছাড় খায়, সেই মাটি ধরেই উঠে দাঁড়ায়। হিন্দুকেও ভারতের দিকে তাকিয়ে না থেকে বাংলাদেশের মাটি ধরেই উঠে দাঁড়াতে হবে। বীরভোগ্য বসুন্ধরা, শ্রীকৃষ্ণ দুর্বলকে সাহায্য করেনা, অর্জুনের মত যোদ্ধাকে সাহায্য করে জিতিয়ে দেয়। ‘য পলায়তি স তীষ্টতি’ ভুলে যান, ‘চামচিকার’ মত বেঁচে লাভ কি? বাঁচতে হয় ‘হাতির’ মত! বলা হয়, দুর্বল বারবার মরে, বীর একবারই মরে। ‘জন্মিলে মরিতে হইবে’, আসুন হাতির মত বাঁচি অথবা বীরের মত মরি! মনে রাখা দরকার, খরগোশ ঘুমিয়ে পড়েছিল বলেই কচ্ছপ জিতেছিল, হিন্দু জাগলে এখন যেগুলো সমস্যা মনে হয়, তখন তা সমাধান হয়ে যাবে। ‘সারভাইভাল অফ দি ফিটেষ্ট’ থিওরী সত্য।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।