মিশুক আহমেদ জয়, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় আইনজীবীর বাসা থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস তুলি (২২) নামে এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

বুধবার (২৩ আগষ্ট) দিবাগত রাতে নিহত তুলির মা শরিফা বেগম বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উলে­খসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান।

মামলার আসামিরা হলেন: আইনজীবী মাহবুবুর রহমান সুমন (২৯), মোছা. এশা (২২), মো. মজিবর (৫২), মোছা. দোলা (৪৬) ও মো. আনোয়ার (৪৭)।

এদিকে, হত্যায় জড়িত কুষ্টিয়া জজ কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান সুমনসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে নিহত তুলির স্বজনরা ও এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে জান্নাতুল ফেরদৌস তুলিকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে দাবি করে হত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়ে বক্তব্য রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস তুলির মা, বোন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

এর আগে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় শহরের মজমপুর এলাকার মফিজ উদ্দিন লেনের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সুমনের ভাড়া বাসার ৪ তলা ফ্ল্যাট থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস তুলির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল­াতেঘড়িয়ার মোল­া পাড়ার ওহিদুল ইসলামের মেয়ে। তিনি কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

এদিকে, তুলির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত বুধবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সংগৃহীত আলামতের রাসায়নিক পরীক্ষা ও ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট এলে পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া যাবে।

এই ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে মামলার এজাহারে উলে­খ করা হয়, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে তুলি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে ক্লাস করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সুমন নিহতের দুলাভাই শাকিল আহমেদকে ফোন করে জানায় তুলি তার বাড়িতে এসে তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তাৎক্ষণিক নিহতের মা ও দুলাভাই সুমনের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখে বাসার সামনে রাস্তায় ভ্যানের ওপর তুলির নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তুলিকে তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তুলিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এজাহারে আরও উলে­খ করা হয়েছে, তুলি ও সুমনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন তুলিকে নিজের ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে যায় সুমন। সেখানে সুমনকে বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে তুলি। এ সময় তুলির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে সুমন বাকি আসামিদের সহযোগিতায় তাকে নির্যাতন করার পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে।

পুলিশ প্রাথমিকভাবে বিষয়টিকে আত্মহত্যা বললেও পরিবার অভিযোগ তোলে পরিকল্পিত হত্যা। এ ঘটনায় ওই ভবনে থাকা একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের দানা বাঁধে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়া জজ কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান সুমনের সঙ্গে নিহত তুলির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তুলি এক সময় যে কোচিং-এ পড়তো সুমন সেখানকার শিক্ষক ছিলেন। এক সপ্তাহ আগে ওই আইনজীবী বিয়ে করেছেন। স্ত্রী নিয়ে তিনি শহরে একটি ৫ তলা ভবনের ৪র্থ তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। সেই ফ্ল্যাট থেকে তুলির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে, আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। মাহমুদুল হাসান সুমন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চকদৌলতপুর গ্রামের মৃত তক্কেল আলীর ছেলে।

(এমএজে/এএস/আগস্ট ২৪, ২০২৩)