স্টাফ রির্পোটার, ঢাকা : আগামীতে নীরব ঘাতক এই কিডনী রোগ দেশে বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় ৫ জন কিডনী রোগে মারা যায়। দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে কিডনী রোগে আক্রান্ত।

 

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ক্যাম্পস-কিডনী এওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি আয়োজিত বিশ্ব কিডনী দিবস-২০১৪ উপলক্ষে ‘বয়সের সাথে বাড়ে কিডনী রোগের ঝুঁকি: প্রতিরোধ করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

 

বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। এ রোগোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে মাত্র ৭৫ জন। প্রতি বছরে এক জন বিশেষজ্ঞের মাথাপিছু রোগী আছে দুই লখ ৪০ হাজার। প্রতিদিন প্রায় ৭০০ রোগী পড়ে।

কিডনী এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) সভাপতি ও ল্যাবএইড হাসপাতালেল চিফ কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, ‘কিডনী রোগ একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনী রোগে আক্রান্ত।’

তিনি বলেন, ‘কিডনী বিকল রোগীর চিকিৎসা এতই ব্যয়বহুল যে, এ দেশের শতকরা ৫ শতাংশ লোকেরও এ দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। সাধারণত ৭৫ শতাংশ কিডনী নষ্ট হওয়ার আগে রোগীরা বুঝতে পারে না যে, সে এ ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগ শুধু কিডনী বিকল করে না হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক ও রক্তনালীর রোগের মৃত্যুঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। ১৬-১৮ শতাংশ লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনী রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনী প্রদাহের কারণে শতকরা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কিডনী ফেইল্যুর হয়ে থাকে। এ ঘাতক ব্যাধি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় রোগ প্রতিরোধ।’

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে মাত্র ৭৫জন কিডনী বিশেষষ্ণ রয়েছে। প্রত্যেক বিশেষষ্ণের প্রতিদিন ৭শ ও বছর প্রতি মাথাপিছু ২ লক্ষ ৪০ হাজার রোগি দেখতে হয়। এ রোগের ভয়াবহতা বিবেচনা করে প্রতিরোধে গণ সচেতনতা বৃদ্ধির আহবান জানান তিনি।

কিডনী বিকল প্রতিরোধে সাতটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে ডা. এম এ সামাদ বলেন, ‘ডায়েরিয়া ও বমিজনিত পানি শূনতারোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রসবকালিন ও দুর্ঘটনাজনিত রক্তক্ষরণ রোধ, চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত ব্যথা ও জীবানুনাশক ঔষধ সেবন না করা, ভেজাল খাদ্য পরিহার, সাপে কাটা ও পোকা মাকড়ে কামড়ে আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে তড়িত চিকিৎসা নেওয়া ও বিশুদ্ধ পানি পান করলে কিডনী রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।’

বাংলাদেশ কিডনী ফাউন্ডেশন সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনে একজন কিডনী রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে কিডনী রোগ বেশি দেখা দিচ্ছে যাদের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস আছে। প্রতি হাসপাতালে ভর্তিকৃত ১০ জন রোগীর মধ্যে তিন জনই কিডনী রোগে আক্রান্ত। ব্যথানাশক ও এন্টিবায়োটিক সেভনের ফলে কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়। প্যারাসিট্যামল ছাড়া সব প্রকার এন্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ঔষধ কিডনীর ক্ষতি করে। দেশে প্রতিবছর ৪০ হাজারেও বেশি লোক কিডনী বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশে কিডনী রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়লেও কিডনী হাসপাতাল, কিডনী ডায়ালোসিস মেশিন নেই। কিডনী চিকিৎসা ব্যয়বহুল বলে দরিদ্র রোগিরা চিকিৎসা নিতে পারে না।’

এ সময় তিনি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কিডনী চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই পরিচালক হেলাল উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শিশু ও নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুব আলী, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম, বাংলাদেশ বেতার মহাপরিচালক আখতার উদ্দিন আহমেদ, শিল্পী আব্দুল জব্বার প্রমুখ।

(ওএস/এএএস/মার্চ ০৮, ২০১৪)