চৌধুরী আবদুল হান্নান


“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির শোক দিবসের বিজ্ঞপ্তিতে ২৬ বানান ভুল!” শিরোনামে গত ১৭ আগস্ট সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাদের যুগপৎ বিস্মিত ও হতাশ করেছে।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে এমন বানান ভুল, ভাষাগত ভুল মেনে নেওয়া যায় না। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা।

পত্রিকায় আরও প্রকাশ, দু-একটি ছাড়া বাকি ভুল মানতে নারাজ অধ্যাপক জিনাত হুদা এবং তিনি আরও বলেছেন কয়েকটি শব্দে টাইপিং ভুল হয়েছে। বেচারা টাইপিস্ট !

অপরদিকে প্রতিটি ভুল বানান বা ভাষাগত ভুল পত্রিকাটিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।

আসলে বিজ্ঞপ্তিটিতে কিছু ভুল তো হয়েছেই এবং সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদ্বয় ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করলে সৃষ্টি হতো মহত্ত্বের এক দৃষ্টান্ত।

শিক্ষকদের কাছ থেকে এমনটিই প্রত্যাশিত ছিল কিন্ত তাঁরা সেদিকে না গিয়ে ইগো-তাড়িত হয়ে বিতর্কে অবতীর্ণ হলেন। অধ্যাপক জিনাত হুদা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে ভুলের পক্ষে সাফাই গাইলেন। তিনি বললেন, “বাংলায় আমি অত্যন্ত ভালো, হলিক্রস স্কুলে আমি পড়েছি। কয়েকটি শব্দে টাইপিং ভুল হয়েছে। অন্যগুলোর কোনোটা ভুল-এটা আমি স্বীকার করবো না।”

তিনি লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, তা না হলে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিদ্যাপীঠের শিক্ষক হলেন কীভাবে! তবে তাঁর শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বিনয়ী হতে শিক্ষা দানের উপাদান নেই।

জন্ম থেকেই ব্যক্তির আচরণ, ব্যক্তিত্ব গঠন হতে থাকে তার বংশগতি আর পরিবেশ থেকে, পরিবেশের শিক্ষা মানুষ যতই গ্রহণ করুক বাবা মা থেকে পাওয়া বংশগতির ধারা বা প্রভাব কখনও মুছে যায় না; বংশ পরম্পরায় দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যসমূহ মানব চরিত্রে বহমান থাকে। সময়ে প্রকৃতরূর প্রকাশ হয়ে পড়ে, চাপা থাকে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার ছাত্র-ছাত্রীদের একটা স্বপ্ন থাকে, এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারার একটা গৌরবও আছে এবং শিক্ষক হতে পারার গৌরব তো আরও বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী, সুফিয়া কামাল ন্যাশনাল পাবলিক লাইব্রেরী (কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী), ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরী চত্বরে ঘুরে বেড়ানো যেন জ্ঞানের রাজ্যে পদচারণা করা। তাছাড়া প্রতিটি বিভাগের আলাদা আলাদা লাইব্রেরী রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল উন্নত মানের একটি জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র নয়, জীবনমান, ভাবনা পরিবর্তনের এক অনুপম অঙ্গন।

বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নানা বিষয়ে অধ্যয়নরত শত শত শিক্ষার্থীর এক মিলন মেলা; একজনপরিশীলিত মানুষ হয়ে ওঠার উপযুক্ত ক্ষেত্র।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনেক মর্যাদাবান এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকের অনুকরণীয়। তাঁরা তো কেবল শিক্ষার্থীদের শিক্ষক নন, আশপাশের সকল মানুষ তাঁর আচার-ব্যবহার লক্ষ্য করে থাকেন।

আমরা কত উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করি, বিদ্যা অর্জন করি, কত সার্টিফিকেট আমাদের, জ্ঞান ভান্ডার পূর্ণকিন্ত এত জ্ঞান দিয়ে আমরা কী করবো, যদি না থাকে কান্ডজ্ঞান!

শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আদর্শ শিক্ষা-গুরু হবেন, এমন প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোলালী ব্যাংক।