ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে বিচরণ করছে সর্বনাশা মাদক। ঘুনে পোকার মত কুরে কুরে খাচ্ছে মানব অস্থিমজ্জা। অজগরের ন্যায় হামুখে খাওয়ার উপক্রম করছে গোটা মানব জাতিকে। এ ভয়ানক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। অভিভাবকরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত। তারা শংকিত কখন মাদকের স্রোতে দিক হারিয়ে নেশার জালে আটকা পড়ে যায় তাদের প্রিয় সন্তান। কখন ছোবল মেরে নেশাগ্রস্ত করে পাঠিয়ে দেয় মরণকূপে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে নিজের সন্তানকে রক্ষার জন্য মা–বাবার সাথে পুরো জাতি আজ শংকিত, আতংকিত। আর কক্সবাজারের মাদক তথা টেকনাফ- উখিয়া- রামুর ইয়াবা সাম্রাজ্য নির্মূলে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়ার দাবিটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে এমনকি সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়েও কথাবার্তা চলছে, ইতিবাচক সাড়াও পড়েছে সর্বত্রই। সচেতন মহলের দাবি, সর্বনাশ ইয়াবার প্রবেশদ্বার বলে চিহ্নিত কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা তিনটি জুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন হোক, কয়েক মাস ধরে চলুক তাদের চিরুনি অভিযান। নেশার ভয়ঙ্কর করালগ্রাস থেকে দেশের বিরাট সংখ্যক কিশোর, তরুণ, যুবকদের রক্ষার সেই সেনা অভিযানকে "জাতীয় কর্তব্য কর্মসূচি" বলে ঘোষণা দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

কক্সবাজারের নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা মাদকের অভিশাপ থেকে বাঁচাতে সেনা অভিযান শুরুর আবেদন জানান। এরপর থেকেই বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ফরিদুল মোস্তফা মাদকের অভিশাপ হিসেবে যেমন ইয়াবাকে চিহ্নিত করেছেন, তেমনি ইয়াবাকে কক্সবাজারের দুর্গতি হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, ইয়াবা নামের এই গোলাপী বর্ণের বড়িটি কক্সবাজারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কয়েক'শ বছরের অর্জিত আস্থা-সম্মানকে বিনষ্ট করে গোটা কক্সবাজারের জনপদ জনগোষ্ঠীকে হাজার বছরের পেছনে ফেলে দিয়েছে। একইভাবে কক্সবাজারের ভূমি ব্যবহার করে কোটি কোটি ইয়াবার চালান পাঠিয়ে সারা দেশ জুড়ে নেশার দুর্যোগ ঘটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কক্সবাজারবাসী বছরের পর বছর ধরে সেই লজ্জার ধকল বয়ে বেড়াচ্ছি। এ ঘৃণার বোঝা দিন দিন বেড়ে অসহনীয় হয়ে উঠছে।

ইয়াবা নির্মূলে বরাবরই আপোষহীন ভূমিকায় থাকা সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা নিজেও ইয়াবা সিন্ডিকেট দ্বারা চরমভাবে নির্যাতিত হন, সর্বশেষ এর অন্যতম হোতা ওসি প্রদীপের হাতে মরতে মরতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ফরিদুল মোস্তফা সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি উল্লেখ করে জানান, ইতিপূর্বে মাদক নির্মূলের নামে ওসি প্রদীপরা যেসব অভিযান পরিচালনা করেছে তা ছিল মাদকসেবী মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের শিখিয়ে দেওয়া মতে। তারা নিজেদের প্রতিপক্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নির্মূল করার ছক তৈরি করে দিতো। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহারকারী মাদক সম্রাটরা বরাবরই সেসব অভিযানে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। এখনও তারা আছেন বহাল তবিয়তে।

তবে র্যাবের অভিযান ছিল খুবই চমৎকার। কিন্তু বিশাল দাপুটে ইয়াবা সিন্ডিকেট একটি মাত্র ঘটনাকে পুঁজি করে র্যাবের প্রশংসিত সেই অভিযানকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এরপর থেকেই চরম হতাশায় কাটাচ্ছেন কক্সবাজারের মানুষজন। মাদক ব্যবসায়ীরা একচ্ছত্র প্রভাব, সমাজ ও প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে নিয়ন্ত্রণ, জনপ্রতিনিধিদের কব্জায় ফেলে রাখাসহ আলাদা মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে রীতিমত। মাদক বাহাদুরির অন্ধ সাম্রাজ্যে মাদক ফাদাররাই দন্ডমুন্ডের হর্তাকর্তা। সেখানে তাদের কথাই শেষ কথা, তাদের চাওয়াতেই আইন বিচার, সালিশ দরবার।

মাদক কী?

মাদক এমন একটি দ্রব্য, যা খেলে নেশা হয়। গাঁজা, ফেনসিডিল, চরস, ভাং, গুল, জর্দা, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, মদ, ইয়াবাসহ সবই মাদকের অন্তর্ভুক্ত। যখন কেউ এসব দ্রব্যাদির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখনই তাকে মাদকাসক্ত বলা হয়। ১৯৮৯ সালে প্রণীত বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মাদকাসক্ত বলতে, শারীরিক বা মানসিকভাবে মাদকদ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা অভ্যাসবশে মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীকে বোঝানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এভাবে মাদকাসক্তির সংজ্ঞা দিয়েছে.মাদক ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকারক এবং মাদকের বারবার সেবন দ্বারা উৎপাদিত হয় (প্রাকৃতিক এবং সিন্থেটিক।)

কেন এই আসক্তি?

মানুষকে মাদকাসক্তির দিকে পরিচালিত করার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, সামাজিক অস্থিরতা, উত্তেজনা, একঘেয়েমি, একাকিত্ব এবং পারিবারিক কাঠামো পরিবর্তনের পরিবেশে ব্যর্থতার সঙ্গে লড়াই করতে অক্ষমতা। তবে মাদকাসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা।

দ্রুত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক উন্নয়ন এবং ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, সামাজিক সচেতনতার অভাব ইত্যাদিও মাদকের সমস্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। পারিবারিক কলহ, ডিভোর্সের কারণে ভেঙে যাওয়া পরিবার, প্রেম ও চাকরিতে ব্যর্থতা থেকে হতাশার কারণেও মাদকাসক্তের হার বাড়ছে। বেশির ভাগ মাদক ব্যবহারকারী ‘পিয়ার প্রেশার’ বা বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়াকে প্রধান ‘পুল ফ্যাক্টর’ হিসেবে দোষারোপ করেছেন। প্রথমবারের মতো মাদক গ্রহণের জন্য কৌতূহল অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে।

৩২ ধরনের মাদক

দেশে বর্তমানে ৩২ ধরনের মাদক সেবন চলছে। এ পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন নামের যেসব মাদক উদ্ধার হয়েছে সেগুলো হচ্ছে হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশি মদ, বিদেশি মদ, বিয়ার, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, কেডিন, ফেনসিডিল, তাড়ি, প্যাথেড্রিন, টিডি জেসিক, ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড, ওয়াশ (জাওয়া), বনোজেসিক ইনজেকশন(বুপ্রেনরফিন),টেরাহাইড্রোবানাবিল, এক্সএলমুগের, মরফিন, ইয়াবা, আইএসপিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, মিথাইল, ইথানল ও কিটোন। এছাড়া ইনোকটিন, সিডাক্সিনসহ বিভিন্ন ঘুমের ট্যাবলেট, জামবাকসহ ব্যথানাশক ওষুধ কিংবা টিকটিকির লেজ পুড়িয়ে কেউ কেউ নেশা করে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

মাদকাসক্তির বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত

১. সমবয়সীদের চাপ, ২. হাতের কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়া অর্থাৎ মাদকের সহজলভ্যতা, ৩. বেকারত্ব ও কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থতা, ৪. আর্থসামাজিক অস্থিরতা, ৫. মাদকের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা, ৬. সমাজে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ৭. পারিবারিক কলহ, ৮. চিকিৎসা সৃষ্ট মাদকাসক্তি, ৯. কৌতূহল, ১০. ধূমপান ইত্যাদি।একটি কথা না বললেই নয় যে, মাদকের নাটের গুরু হচ্ছে সিগারেট। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাদকাসক্তি ও ধূমপানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি মারাত্মক বলে উল্লেখ করেছে।তামাকের ধোঁয়ায় ৭ হাজার রাসায়নিক পদার্থ আছে, যার মধ্যে ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টি করে এবং এর একটি উপাদান মাদকের আওতায় পড়ে, সেটি হচ্ছে নিকোটিন। গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী। অর্থাৎ ধূমপান দিয়ে তারা তাদের নেশা শুরু করে। পরবর্তীকালে তারা গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও কোকেনে আসক্ত হয়।

এক নজরে বাংলাদেশে মাদকের পরিসংখ্যান

সমাজের ১৫-৩০ বছর বয়সীদের মাদকাসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অধিদফতরের ২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৬-৪০ বছর বয়সীদের প্রায় ৮৪ দশমিক ২৭ শতাংশ মাদকাসক্ত। এই বয়স সীমার মধ্যে ২১-২৫ বছর বয়সী যুবকরা রয়েছেন ‘সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে’। ১৬-২০ ও ২৬-৩০ বছর বয়সীরা ‘মধ্য ঝুঁকি’; ৩১-৩৫ বছর বয়সীরা রয়েছেন ‘স্বল্প ঝুঁকিতে’।বাংলাদেশে প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন মানুষ মাদকাসক্ত। দেশের বেকার জনসংখ্যারও বেশ বড় অংশ মাদকাসক্ত। মোট মাদকাসক্তদের ৪৮ শতাংশ শিক্ষিত এবং ৪০ শতাংশ অশিক্ষিত। মাদকাসক্তদের প্রায় ৫৭ শতাংশ যৌন অপরাধী, যাদের ৭ শতাংশ হলো এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত। সারা দেশে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মাদক ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন, যাঁদের মধ্যে ২৭ হাজার ৩০০ জন মহিলা।

মাদক সেবনে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ গুলো

মাদক জীবন থেকে জীবন কেড়ে নেয়। মাদক সেবন ভীষণ ক্ষতিকর। একজন মানুষের ব্যক্তি জীবন এবং সামাজিক জীবনকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এটি। নিয়মিত মাদক সেবনের ফলে ব্যক্তির মেজাজ-মর্জি, বিচার-বিবেচনা এবং নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা, আবেগের উচ্চমাত্রা পরিবর্তন প্রভৃতি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যার কারণে ব্যক্তিগত সমস্যার পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়। আসুন জেনে নেই মাদক সেবনে কী কী মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি হয়।

* সম্পর্কের অবনতি: নিয়মিত মাদক সেবনের ফলে ব্যক্তির মেজাজ দ্রুত পরিবর্তিত হয়। ফলে তারা অল্পতেই বিরক্ত হয় এবং রেগে যায়। যার কারণে অন্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয় এমনকি কারো কারো সাথে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে প্রায়ই শোনা যায় মাদকসেবীদের হাতে পরিবারের সদস্যরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

* বিচার-বিবেচনা লোপ পায়: নিয়মিত মাদক সেবনের ফলে ব্যক্তির সুস্থ চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণ লোপ পায়। যার কারণে কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতি কিংবা কোনো বিষয়ে সঠিক বিচার-বিবেচনা, মূল্যায়ন কিংবা বিশ্লেষণ এবং অনুধাবন করার ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকে না।

* সিদ্ধান্ত হীনতা: মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। বিচার-বিবেচনা লোপ পাওয়ায় সঠিক সিদ্ধান্তটি সঠিক সময়ে নিতে পারে না তারা। যেকোনো বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং আত্মমর্যাদাবোধ বিলুপ্ত হয়।

* আসক্তি: যারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে তারা নিজের পরিবারের জন্য যেমন একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি করে একই সাথে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ওই পরিবারগুলোকে দারুণভাবে ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয়। সমাজের বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে এরা সহজে জড়িয়ে পড়ে।

* আত্মনিয়ন্ত্রণ হারানো: মাদকাসক্ত ব্যক্তির নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যদিও সে বুঝতে পারে যে কাজটি করছে তা অন্যায় হচ্ছে তবুও সে নিজেকে অন্যায় থেকে নিবৃত করতে পারে না। আর ধীরে ধীরে তার অন্যায়ের মাত্রা বাড়তে থাকে, তবুও সে নিজেকে অন্যায়ের পথ থেকে ফেরাতে পারে না।

* উদ্বিগ্ন: নিয়মিত মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বদা একটা উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা বিরাজ করে। তাদের মন-মানসিকতা দ্রুত পরিবর্তিত হয়। যেমন : এই খুব উৎফুল্ল আবার এই খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ফলে কোনো কাজ একাগ্রচিত্তে করতে পারে না।

* কাজে আনন্দ লোপ পাওয়া: মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি কোন কাজে উৎসাহ পায় না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার আনন্দ আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে। আর কোনো কাজ করেই তখন সে আর আনন্দ বা আগ্রহ পায় না।

* বিপজ্জনক কাজে জড়িয়ে পড়ে: মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে মারাত্মক বিপজ্জনক কাজ করতে শুরু করে। যেমন: রাস্তায় বেপড়োয়া গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য প্রভৃতি কাজগুলো দিন দিন বেড়ে যাবে। যার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা, অকাল মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটে থাকে।

পরিশেষে বলতে চাই, মাদক এক জটিল সমস্যার নাম ' মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার ভয়ংকরতম ব্যাধিগুলোর অন্যতম। বিশ্বে অগণিত সফল জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, টেকনিশিয়ান ও অনুরূপ সফল মানুষের জীবন ও পরিবার ধ্বংস হয়েছে মদের কারণে। দিনে দিনে এই সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠছে। একটা পরিবারে একজন সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে পড়লেই সেই পরিবারে নেমে আসে বিভীষিকাময় পরিবেশ। মাদককে ঘিরে যেসব সমস্যা তৈরি হয় সেটা একটা পরিবারকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।

মাদক সমস্যা পারিবারিক ক্ষেত্র থেকে ছড়িয়ে যায় সমাজের গন্ডিতে। শেষ পর্যন্ত সেটা রাষ্ট্রীয় সমস্যায় পরিণত হয়।তাই সীমান্তে মাদক-চোরাচালান রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। কারণ আমাদের দেশ মাদক-চোরাচালানের রুটগুলোর মাঝামাঝি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের (১৯৯০) ধারাগুলো সময়োপযোগী করে এর যথাযথ প্রয়োগ ও কঠোর বাস্তবায়ন করা গেলে মাদকের অপব্যবহার অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। তাই কক্সবাজারের সচেতন দেশপ্রেমী সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দারাও অভিন্ন মতামত ব্যক্ত করে বলেছেন, যেভাবে চলছে তা সভ্য সমাজ ও আইনবদ্ধ রাষ্ট্রে চলতে পারে না, চলা উচিত নয়। অচিরেই স্থায়ী সমাধান জরুরি।

সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে শুধু কক্সবাজার কেন্দ্রিক বিরতিহীন অভিযান চান তারা। সেই অভিযানে সত্যি সত্যি মাদক থেকে সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সুস্থ মানুষজনকে সম্পৃক্ত করা হোক, তারাই মাদকের রিং লিডার থেকে শুরু করে গডফাদারদের চিহ্নিতকরণের সহায়তা করবে। জাতীয় এ কর্তব্য কর্মসূচির মাধ্যমেই কক্সবাজারসহ দেশবাসী মাদকমুক্ত নতুন সূর্য উদ্ভাসিত ভোর দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান।আর মাদক-ব্যবসায়ী ও চোরাচালানকারীরা দেশ ও জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু । এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

মাদকব্যবহারের ধ্বংসাত্বক প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে মাদকমুক্ত সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার কোনও বিকল্প নেই।তাই আসুন, আমরা সবাই মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করি, তাদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাব্যবস্থার সুযোগ করে দিই। তাহলেই তারা সমাজের বোঝা না হয়ে বরং সুস্থ হয়ে পরিবারে ফিরে আসবে, তারাই সমাজকে সঠিকপথে পরিচালিত করবে।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।