অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ শহরের অমিতাভ সাহা হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনও পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ ঘটনা উন্মোচনে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম। এ দিকে এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। 

জানা গেছে, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বাকাইল গ্রামের অশোক সাহার ছেলে অমিতাভ সাহার কথিত স্ত্রী তিশা নন্দি ও তার মামা বাড়ি একই এলাকায়। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো। আগের স্বামী-সন্তানকে ছেড়ে তারা দুজনে ঝিনাইদহে বসবাস শুরু করেন। তিনি নিহত অমিতাভকে স্বামী বলে দাবী করলেও গত ৯ আগষ্ট ঝিনাইদহ নোটারী পাবলিকে উপস্থিত হয়ে অমিতাভকে আইনমতে ত্যাগ করে দেন।

তিশা নন্দি ত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, অমিতাভকে বিয়ের পর থেকে তার সংসারে অশান্তি। যৌতুক নিয়ে তাকে মারধর করা হতো প্রতিনিয়ত। অমতিাভ পরনারীতেও আসক্ত ছিল। একাধিক মামলা আছে তার নামে। আগেও তার স্ত্রী ছিল। ফলে আমি তাকে স্বামী হিসেবে ত্যাগ করেছি। তিশা নন্দি কালীগঞ্জ উপজেলার গোমরাইল গ্রামের বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের মেয়ে হিসেবে ত্যাগপত্রে উল্লেখ করলেও অমিতাভের মরদেহ উদ্ধারের সময় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান তার বাড়ি মাগুরার বিনোদপুর। ফলে অমিতাভ হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে অপর একটি সূত্রের দাবী, বেপরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তিশা নন্দী। যার কারনে প্রথম স্বামী সন্তানকে ছেড়ে বছর দুয়েক আগে ঘর বাঁধেন অমিতাভ সাহার সাথে। ৭-৮ মাস আগে ঝিনাইদহ শহরে এসে তারা বসবাস শুরু করেন। সেখান থেকে পরিচয় হয় যুবদল নেতা রাজুল হোসেন রাজুর সাথে। সেখান থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা দেখা দেয়। রাজুলের সাথেই ঝিনাইদহ জজ কোর্টের আইনজীবী জাকারিয়া মিলনের দিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে অমিতাভ সাহাকে ত্যাগ করেন তিশা নন্দী। ৩১ আগস্ট অমিতাভ সাহা নিখোঁজের দিন ঝিনাইদহ শহরে জাকারিয়া মিলনের মোটরসাইকেল ব্যবহার করে মামলার প্রধান আসামী রাজুল হোসেন রাজু। এ নিয়ে সন্দেহের তীর বাড়তে শুরু করেছে চারপাশে।

অমিতাভ ত্রিভুজ প্রেমের বলি, না পরকীয়া প্রেমের কারণে হত্যার শিকার হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

ঝিনাইদহ জজ কোর্টের আইনজীবী জাকারিয়া মিলন দাবী করেন আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। রাজুল হোসেনও বিএনপির রাজনীতি করে। সেই সুবাদে বিভিন্ন মামলার জন্য আমার চেম্বারে আসতো। রাজুল বিভিন্ন সময়ে আমার মোটরসাইকেল ব্যবহার করতো। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক ফরিদ হোসেন জানান গত রোববার দুপুরে তিশা নন্দী বাদী হয়ে রাজুল হোসেনকে প্রধান আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় বিভিন্ন ভাবে হত্যান্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, রবিবার সকালে ঝিনাইদহ শহরের ধোপাঘাটা পুরাতন ব্রীজের সামনে টার্মিনাল সড়কের এলাকার রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি ও মুখে পলিথিন মোড়ানো অবস্থায় অমিতাভ সাহার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩)