শ্রীনগর প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের লস্করপুরে জোরপূর্বক ব্যক্তি মালিকানা জমি ভরাট কাজে বাঁধা দেওয়ায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার সৌদি আরব প্রবাসী মো. ইব্রাহিম (৫২) নামে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিভিডি) ভর্তি করা হয়। রিং পরানো স্টোকের রোগী হওয়ায় ইব্রাহিমের জীবন আশঙ্কাজনক। একই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীরের ছোট বোন সুহিন বেগম (৩৫) ও তার ছেলে মো. ইমানের বিরুদ্ধে এই হামলার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। 

অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার আব্দুল জাব্বার খানের কারসাজিতে বিরোধপূর্ণ জায়গাটি রাতের আধারে ড্রেজারের মাধ্যমে জোরপূর্বক ভরাট কাজ শুরু হয়। এতে জমির মালিক মো. ইব্রাহিম বাঁধা প্রদান করে প্রতিবেশী মা ও ছেলে ইব্রাহিমকে মারধর করে। এর ২দিন আগে জোরপূর্বক জমিটি ভরাটের জন্য ড্রেজার পাইপের সংযোগ দিলে (গত বুধবার) সুহিন বেগমের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ইব্রাহিম শ্রীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয়রা জানায়, লস্করপুর গ্রামের মো. মোগদম শেখের পুত্র মো. ইব্রাহিম ও মো. ইস্রাফিলের মধ্যে ওয়ারিশ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। ১৫দিন আগে দুই ভাইয়ের মিমাংসার জন্য স্থানীয় মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বৈঠকে বসেন।

শালিসদাররা জানান, মো. ইস্রাফিল যেহেতু বাড়িতে বসবাস করেন না সেই হিসেবে পৈত্রিক বসতবাড়ির পাশে তাদের এজমালি সম্পত্তির প্রায় ১৪ শতাংশ অভরট জমি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে কসর হিসেবে ডোবা ভরাটের জন্য ইস্রাফিলকে তার বড় ভাই ইব্রাহিম ৭ লাখ টাকা দিবে। আমরা এখন ইস্রাফিলের জায়গা বিক্রির কথা শুনছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হারুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইব্রাহিমের সাথে সুহিনের ধস্তাধস্তির হওয়ার কথা শুনেছি। সুহিন বেগম ওই জায়গা ইস্রাফিলের কাছ থেকে কিনেছে। এ ব্যাপারে জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ইস্রাফিলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। বাড়িতে গিয়েও ইস্রাফিলের স্বাক্ষাত পাওয়া যায়নি।

ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. নয়ন বলেন, আব্দুল জাব্বার খানের কথায় জায়গা ভরাটের জন্য আসছি।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা সাব্বির হোসেন নাছিম জানান, সুহিন বেগম জোরপূর্বক ইব্রাহিমের মালিকানা জায়গা ভরাটের চেষ্টা করছে। শুনেছি সুহিন বেগম ইস্রাফিলের কাছ থেকে জমি বায়নাপত্র করেছে। যদি বায়নাপত্র করেও থাকে আমার জানামতে সুহিনের দাবিকৃত জায়গাটি ইব্রাহিমের মালিকানা জায়গা। হুট করে সে ওই জায়গা এভাবে ভরাট শুরু করতে পারেন না।

আব্দুল জাব্বার খানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুহিন বেগম সম্পর্কে আমার চাচাতো বোন হয়। সেই সুবাদে জায়গাটি ভরাটে জন্য ড্রেজার লাগানো কথা বলি। পুলিশ কাজ বন্ধ রাখতে বললে আমি ড্রেজার বন্ধ করে দেই। শুক্রবার সকালে মো. ইব্রাহিমের স্ত্রী রোকশানা আক্তার মোবাইল ফোনে জানান, তার স্বামী এখন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে আছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ এসে ভরাট কাজ বন্ধ করে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সুহিন বেগম ও তার ছেলে বাড়িতে এসে তার স্বামীকে কিলঘুষি মেরে আহত করে। পরে উপায় না পেয়ে ৯৯৯ কল করে পুলিশের সহায়তা নেই। এখন হাসপাতালে অসুস্থ স্বামীর পাশে থাকার কথা বলেন তিনি।

অভিযুক্ত সুহিন বেগমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইব্রাহিমের ছোট ভাই ইস্রাফিলের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছি। এখন জায়গা ভরাট শুরু করলে পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে দেন। আমরা ইব্রাহিমকে মারধর করিনি। বিরোধপূর্ণ জায়গা ক্রয়সূত্রে আলোচনা ছাড়া ভরাট করা কতটা যুক্তিসংঙ্গত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে যান।

হাঁসাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান খান জানান, কিছুদিন আগে ইব্রাহিম ও ইস্রাফিল আমার কাছে আসছিল। তারা বলেছেন এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে বসে বিরোধের মিমাংসা করবেন। এখন কি হয়েছে আমার জানা নেই।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শ্রীনগর থানার এসআই মো. মাসুদ মোল্লা জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বিরোধপূর্ণ জায়গা ভরাট হচ্ছিল। শান্তি শৃংঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ড্রেজার বন্ধ রাখতে বলি।

(এআই/এএস/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩)