মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের কালকিনিতে পাগলা কুকুরের কামড়ে অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন। নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষকে কুকুর কামড় দিয়েছে। তবে এরমধ্যে শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি।

রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে একসাথে এতো রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে টিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। হাসপাতালে আসা সকলকে টিকাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল, স্বজন ও আহতদের সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার কাশিমপুর এলাকা, আলীনগর, কালীগঞ্জ, ফাসিয়াতলা, তালতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাগলা কুকুর কামড় দিয়ে অর্ধশত মানুষকে আহত করেছে। রবিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আহতদের হাসপাতালে আসতে দেখা যায়।

এর মধ্যে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি আছেন ২৫ জন। এরা হলেন কালকিনির আলীনগর এলাকার রিয়াজ খান (১৫), ফারদিন (১৫), রিয়াজ (৪০), সাত্তার সরদার (৬০), রিপন ঢালী (৫০), আ. হাই (৫৫), মরিয়ম (৬০) প্রমুখ।

কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন ১৪ জন। এরা হলেন কালকিনির দক্ষিণ কৃষ্ণনগরের মোহাম্মদ উল্লাহ (৮), চর ঝাউতলা এলাকার আবুল হোসেন (৭০), শিকারমঙ্গলের বর্না মন্ডল (১৬), চর ঝাউতলা এলাকার খাদিজা (৬) কুলসুম (৫৫), সোহেল (৩২) রোজীনা (৩০), আব্দুল্লাহ (১৪) সোহেদা বেগম (৭০), ববি (৪৬), জাহানারা বেগম (৬০), শাহ আলম (৫০), নুরুন নাহার (৫০), শ্যামলী (৫০)। এছাড়াও অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকেই ঢাকা ও বরিশালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফারহানা আফরোজ মুক্তা।

কুকুরের কামড়ে আহত কালকিনির আব্দুল ছাত্তার শিকদার বলেন, আমি বাড়ি থেকে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন একটি কুকুর এসে পায়ে কামড় দেয়। আশে পাশের লোকজন এসে আমাকে রক্ষা করেছে। পরে হাসপাতালে এসে টিকা দিয়ে এখন ভর্তি আছি।

৮০ বছরের বৃদ্ধ মফিজ উদ্দিন বলেন, সকালে বাড়ির সামনে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম। তখন একটি কুকুর এসে কামড় দেয়। এতে আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। প্রচন্ড ব্যাথায় কষ্ট হচ্ছে।
কালকিনির আলীনগরের টুমচর এলাকার ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী রূপালী, হালিমা, লাবিবা, শাহীন, ফরহাদ, ইসমাইলসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা বিদ্যালয়ে যাবার পথে কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীর রূপালীর বাবা ফজলুল সরদার ও আরেক শিক্ষার্থী হালিমার চাচা মুজাম্মেল বেপারী জানান, কালিগঞ্জের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাবার পথে পাগলা কুকুরের কামড়ে তারা অসুস্থ হয়েছে। একসাথে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কুকুর কামড় দিয়েছে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ঝুমা সেন বলেন, সকাল থেকে একটানা সমান তালে রোগী আসতেছে হাসপাতালে। সাধারণ রোগীদের সাথে কুকুরে কামড় দেয়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম অবস্থা। তবুও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াদ মাহমুদ বলেন, একসাথে ৮-১০টি এলাকায় কুকুরের আক্রমণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় আহতের হাসপাতালে আসন সংকট দেখা দিয়েছে।

কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফারহানা আফরোজ মুক্তা বলেন, সকাল থেকে পাগলা কুকুরের কামড়ানো রোগী আসছে। ইতিমধ্যে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা দিয়েছি। আমরা বেশির ভাগ রোগীকে বরিশাল, মাদারীপুর ও ঢাকা পাঠিয়েছি। কারণ এত পরিমাণ কামড়িয়েছে এখানে রাখা সম্ভব না তাই পাঠাতে হয়েছে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জণ ডা, মুনীর আহম্মদ খান বলেন, ইতিমধ্যেই হাসপাতালে ২৫ জন কুকুরের কামড়ে ভর্তি হয়েছে। তবে আরো রোগীর আসছে। অনেকেই ভর্তির অপেক্ষায় আছে। এর সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করছি। তবে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা আছে। সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

(এএসএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩)