বিপুল মাহমুদ


মুসলিম বিশ্বের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক জলজ্যান্ত দানব। ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ থেকে শুরু রাশিয়ার রাজত্ব রুখতে তালেবান সৃষ্টি এবং সর্বশেষ তালেবানি সন্ত্রাস দমনের নামে আফগানিস্তানে হামলা চালানোর ঘটনা মুসলিম বিশ্ব ভুলে যায়নি। যদিও শেষ পর্যন্ত তালেবানদের হাতেই ক্ষমতা ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু ইরাক কিংবা তালেবান নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহারাইন, আফ্রিকার লিবিয়া, মিশর, তিউনেশিয়ায় আরব বসন্তের নামে সরকার বিরোধী যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তাতে প্রত্যক্ষ মদদ ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তিউনিশিয়া, মিশর, লিবিয়ায় সরকারের পতন ঘটানো গেলেও বাকি দেশগুলোতে সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়নি। তাই বলে তারা পিছুও হটে যায়নি। বরং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা গোষ্ঠিগুলো আর আল কায়েদা, আইএসকে অস্ত্র সরবরাহ করে পুরো আরব বিশ্বে চরম অস্থিরতা তৈরি করে রাখে। যা আজও বিদ্যমান আছে সিরিয়াতে।

এসব ঘটনা থেকে এটা পরিস্কার যে, মুসলিম বিশ্বের প্রতি একটা চরম বিদ্বেষ ছড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোতে অস্থিরতা জিইয়ে রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছিল।

২০০১ সালে যখন নাইন-ইলেভেন ঘটল অর্থাৎ নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারসহ অন্তত চারটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল, তখনি এই হামলার জন্য মুসলিম বিশ্বকে দায়ি করে ‘‘মুসলিম ব্যান’’ এর ব্যানারে বেশিরভাগ মুসলিম দেশকে সন্ত্রাসী বা টেরোরিস্ট দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। অর্থাৎ ৯/১১-এ টুইন টাওয়ার হামলা বিশ্বব্যাপী বিভেদের এক স্পষ্ট সীমারেখা টেনে দেয়। সেই সীমারেখার একদিকে মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহ আর অন্যদিকে পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র।

এসব ঘটনা পরিস্কার বুঝিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই মুসলিম বিদ্বষী এক রাষ্ট্র। তাদের কাছে সবার আগে নিজের স্বার্থ। তাদের স্বার্থে আঘাত লাগলেই বেঁকে বসে যুক্তরাষ্ট্র।

আমরা যদি পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, শুধুমাত্র ৯/১১ ঘটনার ফলশ্রুতিতে টেরোরিস্ট হিসাবে পরিচিত করেছে বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম দেশকে, আর এটা প্রতিষ্ঠিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র “মুসলিম ব্যান” এর মাধ্যমে। তবে তারও অনেক আগে থেকেই মুসলিম বিশ্বকে বাঁকা চোখে দেখে যুক্তরাষ্ট্র।

এবার আসা যাক, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের স্বার্থ কিভাবে মুসলিম বিশ্বকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে, যার মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তকমা দিচ্ছে তার বেশ কিছু উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে।

আফগানিস্থানে রাশিয়ার আগ্রাসন রুখার নামে তালেবানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রশিক্ষণ নিয়েই এই আফগান তালেবানরা পরবর্তীতে আল কায়দা হিসেবে পৃথিবী জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ৯/১১ এর মতো ঘটনা ঘটায়। তার পরই বেঁকে বসে যুক্তরাষ্ট্র। চড়াও হও নিজেদের সৃষ্টি তালেবানি আল কায়দার বিরুদ্ধে। আল কায়দার নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার নামে পুরো আফগানিস্থানকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের এই হামলা থেকে মুক্তি পায়নি পাকিস্থানও।

আল কায়েদা ধ্বংসের নামে প্রায় ২১ বছরের সেই যুদ্ধে আফগানিস্তানকে ছারখার করে দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলায় প্রাণ হারায় এক লাখ ৭৪ হাজার বেসামরিক মুসলিম নাগরিক। সন্ত্রাস দমনের নামে কার্যত আমেরিকা বেসামিরিক লোকদের হত্যা করে।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ আফগানিস্তানে শুরু করেছিল ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট সেই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে আফগান ছাড়ে তালেবানদের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র।

নিজেদের প্রয়োজনে আফগানিস্তানে তালেবান বা আল কায়েদা’র সৃষ্টি করেছিল যে যুক্তরাষ্ট্র; তারাই আবার সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলিম বিশ্বের উপর হামলাও করেছে। হত্যা করেছে নারী,পুরুষ, শিশু সবাইকে। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে ক্রাইমের শিকারে পরিণত করেছে। অর্থাৎ রাশিয়াকে শায়েস্তা করার নামে মূলত আফগানিস্তানকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এই অঞ্চলকেই তারা শেষ করে দিয়েছে।

শুধু আফগান নয়, শুরুতেই বলেছিলাম, মুসলিম বিশ্বকে নানান কৌশলে ধ্বংস করতে সব সময় তৎপর যুক্তরাষ্ট্র। সেটা তালেবান বা আল কায়েদা হোক আর স্বৈরাশাসক উৎখাতের নামে হোক।

যেমন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আসাদ বিরোধী সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এসডিএফ-এর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। নানা ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছে। নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করে সিরিয়াকে অস্থির করে তুলেছিল। শুধু যে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছে তা কিন্তু নয়, মার্কিন সৈন্যও পাঠিয়েছিল বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার জন্য। তারা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্রিয় ছিল। এখনও সিরিয়ায় ১৫০০ মার্কিন সৈন্য তৎপর রয়েছে। সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। আরও এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি গৃহহীন হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তথ্য অনুযায়ি, তাদের এসব সাহায্যের মধ্যে রয়েছে বোমা বর্ষণ করা, স্থানীয় বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা এবং অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা।

সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারলেও লিবিয়াতে তারা গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সফল হয়। এ জন্য তারা গাদ্দাফিকে লিবিয়ার মানুষের কাছে ভিলেন বানিয়েছিল। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে একটা গোষ্ঠিকে লেলিয়ে দিয়েছিল। বিরোধীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। অথচ এই গাদ্দাফি ছিলেন লিবিয়ার মানুষের ত্রাতা। অথচ তাকে ভিলেন বানিয়ে হত্যা করে আমেরিকা। গাদ্দাফিকে হত্যার পর থেকেই লিবিয়াতে যে বিশৃঙ্খলা শুরু হযেছে তা আজও থামেনি। গাদ্দাফির মৃত্যুর পর যারা দেশটির ক্ষমতায় এসেছে তাদের চেয়ে তিনি অনেক ভালো ছিলেন।

গাদ্দাফিকে হঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ছিল ইতালি। ইতোমধ্যে ইতালি নিজেদের ভুল স্বীকারও করেছে। ইয়েমেনেও লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক হত্যার শিকার হচ্ছেন শুধুমাত্র আমেরিকার কারণে।

ইরাকের কুয়েত আক্রমণের পর থেকেই আমেরিকা বেজায় নাখোশ ছিল। ওই সময়েই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কুয়েতকে রক্ষার নামে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সৌদিআরবে মার্কিন ঘাঁটি তৈরি করা হয়। সেই যুদ্ধে ইরাক পরাজিত হয়। ইরাকের বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্তত ৩৪টি দেশ নিয়ে মার্কিনীদের যুদ্ধের মূল কারণ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ করে কুয়েতের তেল সম্পদ। আমেরিকার দুশ্চিন্তার কারণ ছিল যে, কুয়েতের তেল নিয়ে ইরাক বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

যাক সেই যুদ্ধে ইরাককে পরাজিত করার পর থেকেই দেশটি আমেরিকার চক্ষুশূল। ৯/১১ এর পর ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি এবং তার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিক গোপনে ওয়াশিংটন সফরের জন্য একটি আমন্ত্রণ পান। সেখানেই সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বারজানি বলেছেন, “আমরা একমত হই বা না-হই, আমরা এতে অংশ নেই কি না-নেই, সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”

সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর দায়িত্ব গ্রহণের জন্যে সম্ভাব্য একটি সরকারকে প্রস্তুত রাখতে ২০০২সালের ডিসেম্বর মাসে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ইরাকে একটি কেন্দ্রীয় ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের ব্যাপারে সবাই সম্মত হয়।

তার পরের ইতিহাস তো সবার জানা। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ইরাকে হামলার পেছনে দেশটির হাতে “গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে” এরকম একটি অজুহাত দাঁড় করায় এবং ২০০৩ সালের ১৯শে মার্চ ইরাকে সামরিক অভিযান শুরু করে। রাজধানী বাগদাদে তীব্র বিমান হামলার মধ্য দিয়ে এই আক্রমণ শুরু হয়। সেই আগ্রাসনে নির্বিচারে ২ লাখ ইরাকি মুসলমানকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর জানায়, ইরাকে নাকি কোন মরণাস্ত্রই নেই!

আমেরিকার সেই আক্রমণের পর মুসলিম রাষ্ট্র ইরাক আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। শুরু হয় জাতিগত দাঙ্গা। ইসলামী স্টেট প্রতিষ্ঠা করতে আমেরিকার মদদেই সক্রিয় হয় আইএস। এভাবেই ইরাকের মত একটি সমৃদ্ধ ইসলামী রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ মদদে মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংসের আরও বহু উদাহরণ তুলে ধরা যাবে। ইরানকে ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্র নানান কৌশল অবলম্বন করছে। নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশটিকে কপোকাত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ইরানের শক্ত মনোভাবের কারণে পেরে উঠছে না।

সব কিছুর নেপথ্যে মধ্যপ্রাচ্যের তেল। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তেলের জন্য সমৃদ্ধি। বহু বছর ধরে এই জ্বালানি তেলের উপর নজর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এজন্য তারা সব সময় চেয়েছে মধ্যেপ্রাচ্যে মার্কিনবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সব সময় তাদের তেলের সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে মুসলিম দেশ ইরাক-ইরান যুদ্ধ, সৌদি-ইয়েমেন যুদ্ধ, জর্দান এর ধ্বংসাবস্থা তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক বিভেদকে তুঙ্গে তুলে দেয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করার কারণে সৌদিআরব, ওমান বা আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।

এই তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করা কিংবা ৯/১১ পরবর্তী সময়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে সন্ত্রাসের আখড়ায় পরিণত হওয়ার তকমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমনের নামে কার্যত মুসলিম দেশগুলোতে আক্রমণ করে। তাদেরই সৃষ্ট এবং তাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে গড়ে উঠা তালেবান, আল কায়দা, আইএস নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত করে মুসলিম দেশগুলোতে জাতিগত দাঙ্গা লাগিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

পরবর্তিতে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরগুলোর কর্মকান্ড আর তাদের দমনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে যেমন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে, তেমনি একইভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর কাছেও অত্যাধুনিক সব অস্ত্র বিক্রি করেছে বছরের পর বছর। আর সন্ত্রাস দমনের নামে মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিভিন্ন মুসলিম দেশের কোটি মানুষকে হত্যা, নিঃস্ব করা আর অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়াই ছিল আমেরিকার মূল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হোক, কি রাখাইনে গণহত্যা, অথবা কুর্দি গণহত্যা, আর্মেনিয়ার গণহত্যা কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের সহয়তা দেখা যায় নি। বরং মুসলিম বিশ্বে গত ৫০ বছরে যেসব হত্যাকান্ড ঘটেছে তার বেশিরভাগ নেতৃত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কাজেই একথা বলাই যায়, মুসলিম বিশ্বের এক আতংকের নাম যুক্তরাষ্ট্র।

লেখক : সংবাদকর্মী।