নীহার রঞ্জন কুন্ডু, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের কাছে মানুষের আশা এবং প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমার যেটা কাজ সেটা তো মানুষ আশা করেই; পাশাপাশি যেটা আমাদের কাজ না, সে ধরনের কাজ বা সেবাও কিন্তু মানুষ আমাদের কাছে চায়। ১৫টি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে যে সেবা দেওয়া হচ্ছে, আমি সেদিক থেকে বলবো যে, ফুলপুরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভাল আছে। 

জানা যায়, ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ফুলপুর থানায় ২৫ জন পুলিশ অফিসারসহ মোট ৬০ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। ফুলপুরের মানুষের নিরাপত্তা ও আইনী জটিলতা নিরসনে সবসময়ই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, ইউনিয়নভিত্তিক সমস্যা সমাধানে ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে রয়েছে ১৩টি বিট অফিস। একজন বিট অফিসার স্থানীয় ছোট ছোট সমস্যা যা আলোচনা সাপেক্ষে মীমাংসা করা যায় অথবা এমন বিষয় যা থানায় না গিয়েও সমাধানযোগ্য সেসব সমস্যাগুলো স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে সমাধান দেওয়া হয়ে থাকে।

ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা আমাদের আইজিপি স্যারের দিক নির্দেশনায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করেছি। স্যারের নির্দেশ মত আমরা কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের কাছে যাচ্ছি। আমরা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এলাকার যত বিশেষ করে প্রান্তিক যেসব লোকজন রয়েছেন, যারা থানা পুলিশকে ভয় পেতো, তাদের এ ভয়টাকে কাটানোর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি।
যে কোন প্রয়োজনে মানুষের পাশে আছি। আমাদের কাছে মানুষের আশা এবং প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমার যেটা কাজ সেটা তো মানুষ আশা করেই, পাশাপাশি যেটা আমাদের কাজ না, সে ধরনের কাজ বা সেবাও কিন্তু মানুষ আমাদের কাছে চায়। আমাদের যেহেতু সুযোগ আছে, আমরা বিট পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করি, আমাদের অফিসাররা বিভিন্ন ইউনিয়নে কাজ করেন; এতে মানুষের সাথে মিশার আমাদের বড় ধরনের একটা সুযোগ রয়েছে। আমরা মানুষকে একটা কথা বললে মানুষ তা শুনে।

পুলিশের কথা কিন্তু মানুষ শুনতে চায়। আমরা যখন কোন এলাকায় যাই, কোন ধরনের প্রোগ্রাম ছাড়া গেলেও আমরা যখন একটা জায়গায় দাঁড়াই, তখন কিন্তু ২০-৫০ জন লোক ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়। উপজেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দুর্যোগ মোকাবেলাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল কিছুই গড়ে উঠেছে বর্তমান ফুলপুরে। সময়ের সাথে সাথে এ উপজেলাকে আরও এগিয়ে নিতে প্রয়োজন স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম। যা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের এডিশনাল আইজিপি দেবদাস ভট্টাচার্য বিপিএম।

উনার নেতৃত্বে ও জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞার দিক নির্দেশনায় ফুলপুর থানা এলাকার সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন জাতিসংঘ পদকপ্রাপ্ত ফুলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।

ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের বিট অফিসাররা স্থানীয় বাজার, মহল্লা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মানুষকে জড়ো করে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে থাকেন এবং উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদেরকে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন করেন। কিশোর গ্যাং যারা বিশেষ করে ক্লাস এইট থেকে টেন লেভেলের ছাত্র তারা যাতে কোন অপরাধে না জড়ায় সেজন্য আমরা প্রতিদিনই কোন না কোন স্কুল ভিজিট করে তাদেরকে সচেতন করি। এর কুফল সম্পর্কে বক্তব্য রাখি। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরা প্রতিদিনই এ কাজটি করছি। ফুলপুরে একসময় একটি বড় সমস্যা ছিল মাদকের সহজপ্রাপ্যতা। বর্তমানে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের কঠোর পদক্ষেপে ও পুলিশ সুপারের কৌশলগত অভিযানে তা শূন্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মাদক ক্রেতা ও গ্রহীতা উভয়ই দেশ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এ হুমকি থেকে নাগরিকদের বাঁচাতে বাংলাদেশ পুলিশ তথা ফুলপুর থানা পুলিশের প্রত্যেক সদস্যই তৎপর রয়েছেন। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে ফুলপুর পুলিশ।

ওসি বলেন, আমরাও কিন্তু মাদকের ব্যাপারে কোন ছাড় দেই না। আমাদের পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ হলো- যেখানেই মাদক থাকবে সেখানেই জিরো টলারেন্স, এতে ছাড়ের কোন সুযোগ নাই।
সন্ধ্যার পর কোন সন্তান যাতে ঘড়ের বাহিরে না, আসে সে ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছে এলাকার জনসাধারণ কে।

জানা যায়, গত ২০২২ সনে ফুলপুর থানায় ২১ টি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এসব মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে ফুলপুর থানার পুলিশ অফিসাররা গভীর থেকে গভীরে যান। আর আত্মহত্যা যাতে না হয় সেজন্য তারা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ইউনিয়নে ইউনিয়নে গিয়ে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করা হয়। অনেক সময় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজটা অল্প বয়সী কিশোর কিশোরীরা করে থাকে। এজন্য বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদরাসা ভিজিট করে পুলিশ তাদের সচেতন করে থাকেন।

আরও জানা যায়, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০২১ সনের ২৩ জুন ফলপুর থানায় যোগদানের পর অদ্যাবধি আইনশৃঙ্খলা উন্নতির সাথে সাথে মাদক, ছিনতাই, সহ সব ধরনের অপরাধ নেমে এসেছে।

(এনআরকে/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০২৩)