আশীষ কুমার মুন্সী


শেখ রাসেল, সবার কাছে পরিচিত একটি নাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। যার জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর, রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। এই বাড়িতেই আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে ছোট্ট রাসেল। কত না স্মৃতিই জড়িয়ে আছে বাড়িটির  ঘরে। যে বাড়িতে খেলাধুলা করতো, ঘোরাঘুরি করতো, যে বাড়িটি সব সময় সবাইকে আনন্দে মাখিয়ে রাখতো, আজ সবই স্মৃতি, নেই শেখ রাসেল। বাড়িটি পড়ে আছে শুধুই স্মৃতি হয়ে।

শেখ রাসেল সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে ভাবি যে, আমরা মানুষ হিসেবে কত নিম্ন স্তরে পৌছে গেছি। রাসেলের মত একটি নিষ্পাপ শিশুকে এভাবে হত্যা করতে পারে, তারা মানুষ নামের কলঙ্ক, শতধিক নর ঘাতক, নর পিচাশদের। ওরাই দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু, ওরা ভেবেছিলো শেখ রাসেল যদি বেঁচে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে তাদের জন্য নিরাপদ নয়। একদিন শেখ রাসেলই পিতার মাতার হত্যার প্রতিশোধ নেবে। এটাই যে সময় আচ করতে পেরেছিলো। তাই তারা নিকৃষ্ট জঘন্যতম হত্যাকান্ড করেছিলো।

বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলাদেশ থেকে চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিলো ঘাতকচক্র। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো। ঘাতকদলের মিশন সফল হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেলের নাম মুছে ফেলতে পারিনি। রাসেলের নাম রয়ে গেল প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, বাংলার প্রতিটি শিশুর অন্তরে। প্রতি বছর ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র—ছাত্রীবৃন্দ শেখ রাসেলের জন্মদিনটি পালন করে। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় রাসেল তুমি রয়েছো আমাদের অন্তরে। কোন দিন তোমায় ভুলবো না। আমরা রবো বাংলার প্রতিটি স্থানে অতন্ত্র প্রহরী হয়ে। তোমার রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এই বাংলার মাটিতে উত্থান হতে দেবো না। যেকোন মূল্যে আমরা প্রতিহত করবো ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।

শেখ রাসেলের জন্মদিবসটি উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানামুখী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আলোচনা সভা, ছোট ছোট শিশুদের কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি। রাসেলের জীবন ও স্মৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ঘাতকদলের নির্মম, নিষ্ঠুর আচরণ ব্যথিত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ রাসেল কে খুব ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধু বাহির থেকে বাসায় এসে ছোট্ট রাসেলকে ডাকতেন। রাসেলও দৌড়ে তার কাছে যেত। বাবাকে পেয়ে সে খুসতে মনভরে উঠতো। বঙ্গবন্ধু দিনের বেশিরভাগ সময় বাসার বাহিরে থাকায় তাকে কাছে পেতো না। এজন্য রাসেলে মন খুব খারাপ লাগতো, অনকে সময় বঙ্গবন্ধু রাসেলকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতো। শেখ রাসেল বাহিরে ঘুরতে পছন্দ করতো, বিভিন্ন বাহানয় বাবা রসাতে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করতো।

বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার সুবাদে শেখ রাসেলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমনের সুযোগ হয়েছিলো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জাপান, রাশিয়া, লন্ডন, ভারত প্রভৃতি দেশ ভ্রমন করে এবং নানা দেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত লাভ ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা এত অল্প বয়সে একজন শিশুর পক্ষে অর্জন করা করা সম্ভব ছিলো না। যদি আজ শেখ রাসেল বেঁচে থাকতো তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, রুচিবোধশীল আদর্শ মানা হতে পারতো।

ঘাতক চক্র রাসেলের মত নিষ্পাাপ শিশুকে বাঁচতে দিল না। কি নিষ্ঠুর, নির্মম ঘাতক দল। ছোট্ট দশ বছরের রাসেল ঘাতকদের বলেছিলো— তোমরা আমার মার কাছে নিয়ে যাও, আমি মাকে দেখবো, তখন একজন ঘাতক তার মার কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বাড়ির দোতালায় এনে বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে।

শেখ রাসেল অত্যন্ত মেধাবী ছিলো। ৪ বছর বয়সে ঢাকার ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হন। সে সুন্দর সুন্দর ছবি অঁাকতে পারতো। তার গৃহশিক্ষক ছিলেন গীতাালি দাশগুপ্ত। তিনি অতি আদর করে ছোট্ট রাসেলকে শিক্ষা দিতেন। আজ যদি রাসেল বেঁচে যেতো তাহলে সে অনেক বড় হতো। শৈশব থেকে রাসেলের মধ্যে অনেক গুনের বহিঃ প্রকাশ ঘটে।

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেলের একান্ত ভক্ত হওয়ায় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুনন্নেছা মুজিব দার্শনিকের নাম অনুসারে কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন শেখ রাসেল। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে অমর হয়ে রইলো। ‘‘ শেখ রাসেল”

লেখক : ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, ৮৩নং গড়ংগল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝালকাঠী সদর উপজেলা।