পূর্ণি ঘোষাল


শারদীয় দূর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। উৎসবটি ধর্মীয় হলেও আজকাল এতে অনেক অধর্ম প্রবেশ করেছে। ধর্মীয় নির্দেশ না থাকলেও আজ দূর্গা পূজার সঙ্গে এমন কিছু বিষয় জড়িয়ে গেছে, যেসব খুব দরকারি নয়।

আজকাল শাস্ত্রীয় নিয়মের চাইতেও মন্ডপের সাজসজ্জাকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়। পূজায় মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের কথা কোনো ধর্মগ্রন্থে লেখা নেই৷ কিন্তু আজ নানাভাবেই মন্ডপে মন্ডপে অর্থ অপচয় হচ্ছে৷

আজ পূজা মন্ডপে হিন্দি গান, ইংলিশ গান বাজছে, পূজো মন্ডপে মদ খেয়ে কিছু লোক নাচানাচি করছে। মা দূর্গাকে আহবান করে উনার চোখের সম্মুখে রং বেরংয়ের লাইট জ্বালানো হচ্ছে।

আচ্ছা যারা এসব করে তাদের চোখের সামনে ৫ মিনিট যদি এত গুলো লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয় তাহলে কেমন লাগবে তাদের কখনো কি ভেবেছে তারা। কি দরকার এত লাইটিং করা? কি দরকার লোক দেখানো এত বড় বড় প্যান্ডেল করা? এত আয়োজন করা? পূজো কি তাহলে লোক দেখানোর জন্য করেন? বড় বড় মূর্তি, বড় বড় প্যান্ডেল, জমকালো আলোকসজ্জায় পূজো করলে হয়ত মিডিয়ার প্রচার আর দর্শনার্থীদের প্রশংসা নিশ্চয়ই পাওয়া যায়।

কিন্তু সেই প্রচার বা প্রশংসায় কি পুণ্য বাড়ে? সেই প্রচার বা প্রশংসায় কি দূর্গা মা খুশি হয়?

প্যান্ডেল নিয়ে আজকাল প্রতিযোগিতাও হয় কার থেকে কে বেশী সুন্দর করেছে, কার থেকে কে বেশী আলোকসজ্জা করেছে, কার থেকে কে বেশী টাকা খরচ করেছে। যারা সাধারণ ভাবে পূজো করে আমরা সবাই তাদের নিয়ে হাসাহাসি করি, আর যারা পূজোর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করে আমরা তাদের বাহবা দিয়ে থাকি।

যে যত বেশী টাকা অপচয় করতে পারে তাকে আমরা তত বেশী বাহবা দিয়ে থাকি। কি দরকার এসব অপসংস্কৃতি পূজায় এনে ধর্মকে কলুষিত করা?

রং বে রংয়ের লাইটি না করলে কি পূজো হয়না? লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে প্যান্ডেল না বানালে কি পূজো হয়না? পূজোর এসব অতিরিক্ত খরচ না করে তা থেকে যদি গরীব দুঃখিদের সাহায্য করা হত তাতে কোনো ক্ষতি হবে কি?

পূজোর অতিরিক্ত টাকা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে কি ধর্মীয় উন্নয়ন কাজ যেমন বিভিন্ন মন্দির প্রতিষ্ঠা বা সংস্কার করা যায় না?

কি দরকার এত টাকা নষ্ট করা। শাস্ত্রসম্মত ভাবে পূজো করলেই তো হয়। অর্থের অপচয় রোধ করে তা কি অন্য কাজে লাগানো যায় না?

সবশেষে বলবো এসব অর্থ অপচয় এবং অপসংস্কৃতি বাদ দিয়ে শাস্ত্রসম্মত ভক্তি সহকারে পূজা করুন। সনাতন ধর্ম রক্ষা করুন।

লেখক : লেখক ও সংবাদকর্মী।