গৌরীপুর প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চলতি আমন মৌসুমে আগাম জাতের ধানের ফলন হয়েছে। এ ধান চাষ করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি বেশী দাম পাওয়ায় কৃষকরা বেশ খুশি।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, আশ্বিন-কার্তিক মাসকে সাধারণত অভাবের মাস বলা হয়। কিন্তু আগাম জাতের আমন ধান চাষ করে ঘরে তোলতে পারায় সে অভার আর এখন নাই। তবে উপজেলায় গত ৫ অক্টোবর অতিবৃষ্টিতে কৃষির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগাম জাতের ধানেরও কিছু ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই বিপর্যয় কাটিয়ে কৃষক আগাম জাতের ধান আবাদ করে ঘরে তুলতে পারছে এটা স্বস্তির বিষয়। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরাও আনন্দিত।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ২০ হাজার ৭শ ২০হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এরমধ্যে আগাম জাতের রোপা আমন আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ২শ ৬৫ হেক্টর জমিতে।

আগাম জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রিধান ৭১, ব্রিধান ৭৫, ব্রিধান ৮৭, বিনা ধান ১৭, বিনা ধান ১৬ ও হাইব্রিড ধান। আগাম জাতের মেয়াদকাল ১১০/১১৫ দিন।

উপজেলায় আমন মৌসুমে শ্রাবণ মাসের প্রথম থেকে মাঝামাঝি সময়ে আগাম জাতের আমন ধান রোপণ করেছে কৃষকরা। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সঠিক পরিচর্যায় আগাম জাতের ধানের ভালো ফলন হয়েছে। আশি^নের শেষ দিকে কৃষকরা আগাম জাতের ধান কাটা শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আশ্বিনের শেষ দিক থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু করেছে কৃষক। প্রতি কাঠায় (১০ শতাংশ) ৫ থেকে ৬মণ করে ধান পাচ্ছে কৃষক। বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ১০৫০ টাকা।

উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কড়মরিয়া গ্রামের কৃষক শেখ সাদী বলেন, আমি আমন মৌসুমে ৯কাঠা জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছি। প্রতি কাঠায় খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। এই ধান আবাদ করে খরচের তুলায় দ্বিগুনের বেশি লাভ হয়েছে। এখন বোরো মৌসুমের আগে জমিতে সরিষা চাষ করবো।

উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের রামগোপালপুর গ্রামের বর্গা কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগে বছরে এক জমিতে বোরো ও আমন দুই ফসল চাষ করতে পারতাম। আগাম ধানের চাষে সময় কম লাগায় এখন আমন ও বোরো আবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি ও সরিষাও আবাদ করতে পাররো।

উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, আমি ৩৩ শতক জমিতে আগাম জাতের ধানের আবাদ করেছি। এই ধান অন্য ধানের চেয়ে অনেক আলাদা। অন্য খেতের তুলনায় সার, কীটনাশক ও সেচ কম লাগে। রোগবালাই নাই বললেই চলে। ফলন বেশি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি বলেন, আমন মৌসুমে উপজেলায় অতিবৃষ্টিপাতে কৃষির ক্ষয়ক্ষতির পরেও আগাম জাতের ধানের ভালো ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয় কাটিয়ে নবান্নের আগেই কৃষক আগাম জাতের ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছে এটা স্বস্তির বিষয়। আগে কৃষক বছরে বোরো ও আমন এই দুইবারের বেশি ফসল ফলাতে পারতেন না। কিন্ত আগাম জাতের ধান চাষ করে কৃষক জমিতে ধানের পাশাপাশি সরিষা, আলু, সব্জি, ডাল সহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে লাভবান হবে। তাই এই জাতের ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।

(এস/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০২৩)