বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় হাজেরা নামের ৪ মাস বয়সী এক শিশুর মরদেহ উদ্ধারের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

নিহত ওই শিশুর মা রুমা বেগমই নিজহাতে তার কন্যাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছেন বলে গতকাল (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এর আগে থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করার পর তাকে (রুমা বেগম) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে পাঠায় পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে হত্যার দায় স্বীকার করেন রুমা বেগম। পরে বিজ্ঞ আদালত রুমা বেগমকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মো. সিরাজুল ইসলাম গতকাল রাতে এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের নির্দেশে ঘাতক মা রুমা বেগমকে রাতেই কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর চাচা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে রবিবার নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।'

এডিশনাল এসপি সিরাজুল ইসলাম জানান, শনিবার সকালে উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামের একটি পুকুর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের পর নিহত শিশুর মা রুমা বেগমের অসংলগ্ন কথাবার্তায় প্রথমেই আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। যে কারণে আমরা রুমা বেগমকে শনিবারই আটক করে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রুমা বেগম তার কন্যা সন্তানকে নিজেই পানিতে ফেলে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।'

নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম জানান, শনিবার সকালে ৪ মাস বয়সী শিশু হাজেরার মরদেহটি বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে উদ্ধারের পর শিশুর মা রুমা বেগম পুলিশকে জানিয়েছিলেন, আগেরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি তার দুই কন্যাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে ঘুম থেকে উঠে তিনি টয়লেটে যান । এরপর টয়লেট থেকে ঘরে ফিরে তিনি আবারো ঘুমিয়ে পড়েন। তবে ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ঘরের দরজা খোলা, কিন্তু বিছানায় তার ৪ মাস বয়সী কন্যা হাজেরা নেই। এরপর হাজেরাকে বহু খোঁজাখুজি করেও পাওয়া যাচ্ছিলোনা। তখন ৯৯৯ নম্বরে কল দেন রুমা বেগম। এক পর্যায়ে পাশের পুকুর থেকে সকালে ভাসমান অবস্থায় শিশু হাজেরার লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসি। তবে তার এসব অসংলগ্ন বক্তব্য শুরুতেই পুলিশের কাছে সন্দেহের সৃষ্টি করেছিলো বলে জানান ওসি মাহবুব আলম।

এলাকাবাসি জানান, রুমা বেগমের স্বামী বিদ্যাকুট পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা প্রবাসী অলিউল্লাহ মিয়া আরব আমিরাতের দুবাই থাকেন। তাদের দুটি কন্যা রয়েছে। বড় কন্যার বয়স ৬ বছর হলেও ছোট কন্যা হাজেরার বয়স মাত্র চার মাস। ঘটনার রাতে দুই কন্যাকে সঙ্গে নিয়েই ঘরে ঘুমিয়েছিলেন রুমা বেগম (২৬)।

এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম হত্যা রহস্যের বর্ণনা দিয়ে বলেন,' কেন শিশু হাজেরাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা করলেন রুমা বেগম? এমন প্রশ্নের জবাবে হত্যাকারী মা রুমা বেগম পুলিশকে জানান, 'বাড়িতে একান্নবর্তী পরিবারের সব কাজ রুমা বেগমকে একাই সামলাতে হত। এ নিয়ে শাশুড়ি ও বাড়ির অন্যান্য লোকজনের সঙ্গে রুমা বেগমের প্রায়ই কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হত। শ্বাশুরীর অনেক কটু কথাও শুনতে হত রুমা বেগমকে। এতে রুমা চরম ত্যাক্ত বিরক্ত ছিলেন। তাই ৪ মাসের শিশু সন্তান হাজেরার সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করতে পারছিলেন না রুমা। এ নিয়ে রুমা এক পর্যায়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব থেকে মুক্তি পেতেই মূলত শুক্রবার মধ্যরাতে শিশু সন্তান হাজেরাকে নিজের হাতে পুকুরে ফেলে দিয়ে হত্যা করেন মা রুমা বেগম।'

এদিকে বহুল আলোচিত শিশু কন্যার রহস্যজনক এ মৃত্যুর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ শিশুটির হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ ঘাতক মাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠাতে সক্ষম হওয়ায় পুরো বিষয়টি নিয়ে এলাকায় এখন আলোচনার ঝড় বইছে।

(জিডি/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২৩)