রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : সিলেট সীমান্তের চিহ্নিত কুক্ষাত চোরাকারবারি বুখাইর দেশ থেকে পালানোর অপেক্ষায় আছেন। যে কোন সময় তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় পালিয়ে যেতে পারেন বলে জানা গেছে। কানাডায় যেতে ইতিমধ্যে তিনি ফিঙ্গারিংয়ের কাজও শেষ করে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। সুত্র বলছে, ভারত থেকে মাদকসহ নানা পণ্যের চোরাকারবারি এবং বাংলাদেশ থেকে নানান পণ্য অবৈধভাবে ভারতে পাচারের মাধ্যমে উপার্জিত বিপুল পরিমান অর্থের একটা বড় অংশ বুখাইর হুন্ডির মাধ্যমে ইতিমধ্যে কানাডায় পাচার করে দিয়েছেন। ঠিক কি পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন তার কোন হিসেব পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি কর্তব্যরত সিআইডি কর্মকর্তাদের উপর বর্বরোচিত হামলা মামলার এজাহারে তার নাম না থাকলেও তদন্তে তার নাম সংযুক্ত হতে পারে বলে পুলিশের গোপন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যে কারণে তিনি আরও তড়িঘড়ি করে দেশ ছেড়ে কানাডায় পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র। অপর দিকে, মামলার পাল্লা ভারি হওয়ায় তিনি প্রবাসে বসে তার অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চোরাকারবারি বুখাইর তার এতোদিনের সহযোগী পলাশকে দিয়ে কানাডায় বসে সিলেট সীমান্তের চোরাকারবারির ব্যবসা পরিচালনা করবেন বলেও জানা গেছে।

এই কুখ্যাত চোরাকারবারি'র নামে সিলেটের বিভিন্ন থানায় অনেকগুলো মামলা রয়েছে। কিছু মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও তিনি রহস্যময় কারণে সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। জনশ্রুতি আছে পুলিশের সাথে ঘনিষ্ঠতা, ইসলামী লেভাস ও সব মহলে ম্যানেজ করার ক্ষমতা তাকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। পুলিশ সুত্রে তার মামলার বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে, সাথে পুলিশ স্বীকারও করেছেন সিলেট সীমান্তে চোরাকারবারিদের অন্যতম হোতা এই বুখাইর।

চোরাকারবারি বুখাইর নানা সময়ে পুলিশের নাম ব্যবহার করেও অন্যান্য চোরাকারবারি ও বৈধ ব্যবসায়ীদের ট্রাক থেকে একটি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তুলেন। এই নিয়ে সম্প্রতি বেশকিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও বুখাইরকে ধরতে পুলিশের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

উল্লেখ্য, সিলেট সীমান্তে প্রায় ৫০টি পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিতভাবে ভারত থেকে চোরাকারবারি'রা বিভিন্ন পন্য আনা-নেয়া করে। এতে সরকার বিশাল আকারের রাজস্ব হারাচ্ছে। সিলেট সীমান্তে বিভিন্ন থানা পুলিশ, সিআইডি পুলিশ, ডিবি বিজিবি ও র্যাব নিয়মিত অভিযান চালালেও তারা বুখাইরদের মতো চোরাকারবারিদের জন্য পেড়ে উঠছেন না। অনেকের বিরুদ্ধে আবার আছে সখ্যতার অভিযোগও। যদিও প্রশাসন সব সময়ই চোরাচালানকারীদের সাথে তাদের সখ্যতার কথা অস্বীকার করে আসছেন।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছেন তাদের নাম ভাঙিয়ে কিছু কুচক্রী মহল নানান সময়ে চাঁদাবাজির খবর তাঁরা পেয়ে থাকেন। তাদের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়, সুনির্দিষ্ট ও লিখিত অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু আফসোস বুখাইর এর মতো দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো করে মামলা থাকলে তাদের সাথে চোর-পুলিশ খেলে থাকে পুলিশ। অপরদিকে চোরাকারবারিদের দ্বারা বিজিবি, র্যাব, পুলিশ মাঝে মাঝেই অতর্কিত আক্রমণ ও অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির স্বীকার হন। কিছু কিছু মামলা হলেও, বেশীর ভাগ ঘটনাই টাকা পয়সায় মীমাংসা হয়। আবার মামলা হলেও তাতে আসামীরা রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার হয় না। র্যাবের উপর আক্রমণের পরে সিআইডি পুলিশের উপরও আক্রমণ হয়েছে উভয় ঘটনায় মামলা হলেও ওই মামলা গুলো শুধু খাতা কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। সম্প্রতি সিআইডির উপর হামলায় নাজমুল নামের সিআইডি পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের হাত ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই বিষয়ে মামলা হলেও জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেননি এখনও। নাকি কোন রহস্যময় কারণে গ্রেফতার করেননি এটা নিয়েও চলছে বিতর্ক। যদিও জৈন্তাপুর থানার ওসি জানিয়েছেন, তারা আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা করছেন।

(আরআর/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২৩)