মোঃ শান্ত, স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদ উৎসবের জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অপেক্ষা করতে হবে আরও একটি বছর।

মঙ্গলবার বিসর্জনের দিন সকালে দশমীর বিহিত পূজা হয়। এছাড়া বিসর্জনের পূর্বে ঢাক-ঊলুধ্বনি-শঙ্খ নিনাদে হিন্দু রমণীদের পরম আকাঙ্খিত সিঁদুর খেলায় মুখর হয়ে ওঠে মন্দিরগুলো। পূজা শেষে দর্পণ ও সন্ধ্যায় বিসর্জন শুরু হয়। এসময় পূজার উদযাপন আর দেবীকে বিদায়ের সুর বেজেছে ভক্তদের মনে। পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন দেবী দুর্গা মণ্ডপ থেকে ফিরে গেছেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) নগরীর বিআইডব্লিউটিএ’র ৩ নং ঘাটে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার আয়োজন করা হয়।

দেখা যায়, একদিকে বিদায়ের সুর অন্যদিকে উৎসবের আমেজ। সন্ধ্যার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ভক্তরা ট্রাক, ভ্যানে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন শহরের ৩নং মাছ ঘাট এলাকাতে। ট্রাকে প্রতিমা নিয়ে ভক্তরা ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রসহ শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। শোভাযাত্রার পূর্বে নারীরা দেবীর ললাটের সিঁদুর আপন ললাটে এঁকে নেন। নগরীর রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো হিন্দু নারীদের উলু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারদিক। এ সময় শহরে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটসমূহে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিসর্জনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি পূজা কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করেন। নিরাপত্তার কাজে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি, সাদা পোশাকধারী পুলিশ, নৌ-পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি টিম, সিভিল সার্জনের মেডিকেল টিমের সদস্যরাও নিয়োজিত ছিলেন। সন্ধ্যার পর থেকেই শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে । যা বুঝিয়ে দিয়েছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরে এবার ২২৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এতেই বোঝা যায় নারায়ণগঞ্জ একটি সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির জেলা। সকল উৎসব আমরা একসাথে উদযাপন করে থাকি। শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

নারায়ণগঞ্জে এবছর মোট ২২৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে সদরে ৪১টি, ফতুল্লায় ২৮টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৭টি, বন্দরে ২৮টি, সোনারগাঁওয়ে ৩৩টি, রূপগঞ্জে ৫৪টি ও আড়াইহাজারে ৩৩টি। এসব মণ্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে পূজা উদযাপন কমিটি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি মন্দের মন্ডপে সিসি ক্যামেরা এবং শিশু সেবক দলের কমিটি কর হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো এবং স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করা হয়।

(এমএস/এএস/অক্টোবর ২৪, ২০২৩)