নীহার রঞ্জন কুন্ডু, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শাহীনুজ্জামান, নামে নয় গুনেই যার পরিচয়। ফুলবাড়ীয়া থানায় যোগদানের পর তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার মাধ্যমে জনগণকে নিরলসভাবে সেবা দিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও নির্ভরযোগ্য করে তুলেছেন। ১৫টি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে যে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেদিক থেকে ফুলবাড়িয়া থানার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভাল আছে।

জানা যায়, ফুলবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিনুজ্জামান অত্র থানায় যোগদানের পর প্রথমেই তিনি মাদক নির্মূলে ভুয়সী প্রশংসা কুরিয়েছেন সাধারণ জনগণের, যদিও এই উপজেলা আয়তন সুবিশাল ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। ৩৯৯ বর্গ কিলোমিটারের এই সুবিশাল উপজেলা ঘিড়ে আছে- মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ভালুকা, সহ টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর ও ঘাটাইল; এতবড় উপজেলায় যোগদানের পরেই ওসি শাহীনুজ্জামান, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত একজন চৌকস নেতৃত্বে তিনি একে একে ফুলবাড়িয়াকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে অনেকটাই সফল ভাবে মুক্ত করেছেন।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় বৃদ্ধ থেকে উঠতি বয়সের মানুষের মাঝে মাদক ভীতি এখন নাই বললেই চলে। এলাকায় যোগদানের পরে জুয়ার উপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করেন। আগে প্রত্যান্ত অঞ্চলে কৃষকদের গরু, ছাগল, হাসমুরগী পাহাড়া দিয়ে রাখতে হতো। এই দিক দিয়ে এখন অনেক নিরাপদ। তিনি আসার পর হয়রানী মুলক সেবা ও দালাল ছাড়া মামলা রেকর্ড সহ সকল প্রকার সেবা বাস্তবায়নের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ওসি শাহীনুজ্জামান। পুলিশী সেবার জনুগনের দৌরগোড়ায় পৌছে দিতে বিট পুলিশের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ফুলপুর থানায় ২৫ জন পুলিশ অফিসারসহ মোট ৬০ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। ফুলপুরের মানুষের নিরাপত্তা ও আইনী জটিলতা নিরসনে সবসময়ই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, ইউনিয়নভিত্তিক সমস্যা সমাধানে ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে রয়েছে ১৩টি বিট অফিস। একজন বিট অফিসার স্থানীয় ছোট ছোট সমস্যা যা আলোচনা সাপেক্ষে মীমাংসা করা যায় অথবা এমন বিষয় যা থানায় না গিয়েও সমাধানযোগ্য সেসব সমস্যাগুলো স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে সমাধান দেওয়া হয়ে থাকে।

ওসি শাহীনুজজামান বলেন, আমরা আমাদের আইজিপি স্যারের দিক নির্দেশনায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করেছি। স্যারের নির্দেশ মত আমরা কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের কাছে যাচ্ছি। আমরা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এলাকার যত বিশেষ করে প্রান্তিক যেসব লোকজন রয়েছেন, যারা থানা পুলিশকে ভয় পেতো, তাদের এ ভয়টাকে কাটানোর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। যে কোন প্রয়োজনে মানুষের পাশে আছি। আমাদের কাছে মানুষের আশা এবং প্রত্যাশা অনেক বেশি।

তিনি বলেন, আমার যেটা কাজ সেটা তো মানুষ আশা করেই, পাশাপাশি যেটা আমাদের কাজ না, সে ধরনের কাজ বা সেবাও কিন্তু মানুষ আমাদের কাছে চায়। আমাদের যেহেতু সুযোগ আছে, আমরা বিট পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করি, আমাদের অফিসাররা বিভিন্ন ইউনিয়নে কাজ করেন; এতে মানুষের সাথে মেলামেশা আমাদের বড় ধরনের একটা সুযোগ রয়েছে। আমরা মানুষকে একটা কথা বললে মানুষ তা শুনে। পুলিশের কথা কিন্তু মানুষ শুনতে চায়। আমরা যখন কোন এলাকায় যাই, কোন ধরনের প্রোগ্রাম ছাড়া গেলেও আমরা যখন একটা জায়গায় দাঁড়াই, তখন কিন্তু ২০-৫০ জন লোক ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়। উপজেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দুর্যোগ মোকাবেলাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সকল কিছুই গড়ে উঠেছে বর্তমান ফুলপুরে। সময়ের সাথে সাথে এ উপজেলাকে আরও এগিয়ে নিতে প্রয়োজন স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম। যা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভুইয়া। উনার নেতৃত্বে ফুলবাড়িয়া থানা আইনশৃঙ্খলা ও মানবিক কার্যক্রম অনেকাংশে উন্নতির শিখরে।

ওসি আরও বলেন, আমাদের বিট অফিসাররা স্থানীয় বাজার, মহল্লা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মানুষকে জড়ো করে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে থাকেন এবং উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদেরকে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন করেন। কিশোর গ্যাং যারা বিশেষ করে ক্লাস এইট থেকে টেন লেভেলের ছাত্র তারা যাতে কোন অপরাধে না জড়ায় সেজন্য আমরা প্রতিদিনই কোন না কোন স্কুল ভিজিট করে তাদেরকে সচেতন করি। এর কুফল সম্পর্কে বক্তব্য রাখি। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরা প্রতিদিনই এ কাজটি করছি।

তিনি বলেন, ফুলবাড়িয়া একসময় একটি বড় সমস্যা ছিল মাদকের সহজপ্রাপ্যতা। বর্তমানে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের কঠোর পদক্ষেপে ও পুলিশ সুপারের কৌশলগত অভিযানে তা শূন্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মাদক ক্রেতা ও গ্রহীতা উভয়ই দেশ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এ হুমকি থেকে নাগরিকদের বাঁচাতে বাংলাদেশ পুলিশ তথা ফুলবাড়ীয়া থানা পুলিশের প্রত্যেক সদস্যই তৎপর রয়েছেন। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে ফুলবাড়ীয়া থানা।

ওসি বলেন, আমরাও কিন্তু মাদকের ব্যাপারে কোন ছাড় দেই না। আমাদের পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ হলো- যেখানেই মাদক থাকবে সেখানেই জিরো টলারেন্স, এতে ছাড়ের কোন সুযোগ নাই।
সন্ধ্যার পর কোন সন্তান যাতে ঘড়ের বাহিরে না,আসে সে ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছে এলাকার জনসাধারণকে।

মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে ফুলবাড়িয়া থানার পুলিশ অফিসাররা গভীর থেকে গভীরে যান। আর আত্মহত্যা যাতে না হয় সেজন্য তারা বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ইউনিয়নে ইউনিয়নে গিয়ে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করা হয়। অনেক সময় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজটা অল্প বয়সী কিশোর কিশোরীরা করে থাকে। এজন্য বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদরাসা ভিজিট করে পুলিশ তাদের সচেতন করে থাকেন। অদ্যাবধি আইনশৃঙ্খলা উন্নতির সাথে সাথে মাদক, ছিনতাই, সহ সব ধরনের অপরাধ নেমে এসেছে-শুন্যেরশুন্যের কোঠায়।

কিছুদিন পুর্বে রাধাকানাই ইউনিয়নের পলাশতলী এলাকায় রাস্তার অভাবে চলার রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবন্ধী পরিবারের জন্যুভর পক্ষের সম্মতি আদায়ে চেষ্ট হন এবং রাস্তা করে দেন। এনায়েতপুর ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার গ্রামীণ ফোনের বিক্রয় প্রতিনিধির টাকা ও বাইক ছিনতাই হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্য আসামী গ্রেপ্তার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করেন। রাধাকানাই ইউনিয়ন এর কুখ্যাত মাদক ব্যাবসায়ী হান্নান কে ৩০৪ পিছ ইয়াবা সহ আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করেন।

ফুলবাড়িয়া উপজেলায় কয়েক জন ব্যাক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, ওসি শাহীনুজ্জামান একজন ভালো সৎ ও সদালাপী একজন ভালো মানের পুলিশ অফিসার, তিনি পুলিশী সেবা জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌছে দিতে সব রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে আমি ফুলবাড়িয়া থানাকে জনগণের অভয়াশ্রম হিসেবে স্থাপন করে যেতে চাই। ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপারের সুযোগ্য নেত্রীত্বে ময়মনসিংহ পুলিশ আজ জনতার পুলিশ হিসেবে উপস্থিত প্রায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যায় ওসি শাহীনুজ্জামান থানা কম্পাউন্ডে কয়েকজন সেবা প্রত্যাসীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

(এনআরকে/এসপি/অক্টোবর ২৬, ২০২৩)