রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া : নড়াইলের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে আমন ধান। সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। তবে ফলন মোটামুটি ভালো হলেও উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন জেলার কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ২শ ৬২ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪২ হাজার ৬শত ৮৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪শ ২৩ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।

এদিকে ফলন ভালো হয়েছে দাবি করে কৃষি বিভাগ বলছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবং কৃষক ন্যায্য মূল্য পেলে আগামীতে আমান চাষাবাদ আরো বাড়বে।

সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে আমন ধানের ক্ষেত সবুজ থেকে সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। কৃষকরাও ফসল ঘরে তুলতে দিন-রাত এক করে কাজ করছে। কেউ ধান কাটছে, কেউ আঁটি বাঁধছে। কেউ কেউ সেই ধান মাথায় নিয়ে ক্ষেত থেকে বাড়ি যাচ্ছে। আবার কেউ করছে মাড়াইয়ের কাজ। সকাল থেকে দিনভর এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক-কৃষাণীরা। তবে কৃষকের মুখে নেই হাসি। ফলন মোটামুটি ভালো হলেও সার, কীটনাশক, ধান কাটা শ্রমিকসহ অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে। খরচের তুলনায় ধানের দাম কম। ফলে ধানের দাম না বাড়লে লাভ তো দূরে থাক এই দামে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে এখন শঙ্কায় কৃষক।

রেজাউল শেখ নামে এক আমন চাষি জানান, সব কিছুর যে দাম, তাতে ধানের দাম ১৫শ টাকার নিচে হলে কৃষকের লস। যেভাবে খরচ হয়, তাতে কৃষকের বেঁচে থাকা সম্ভব না। তারপরও নিজেদের জমি, চাষ না করে কি করবেন। না খেয়ে তো আর মরা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে লস হলেও চাষ করা লাগে।


সদর উপজেলার আমন চাষি তাহের আলী বলেন, তারা যে দাম পাচ্ছেন, সে দামের তুলনায় যে খরচ হয় সে খরচের পয়সা তাদের বাঁচে না। এ বছর পোকার (কারেন্ট পোকা) কারণে বিঘা প্রতি ধানের ফলনও কম হয়ছে। তারপর সার-মাটিতে যে খরচ, তাতে চালান একটুও মেলে না। চাষি মানুষ, চাষ করতে হয়, তাই করে যাচ্ছেন।

কৃষক আলাউদ্দিন মোড়ল জানান, ধানের ফলন একেবারে খারাপ না। ফলন ভালোই। কিন্তু সার, ওষুধ দিয়ে যে খরচ পড়ে তাতে তাদের মোটেই লাভ থাকে না। খরচের তুলনায় ধানের দাম কম। দাম বাড়ানো উচিত। দাম না বাড়ালি কৃষক বাঁচবে না।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, আমনের ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা আগ্রহের সঙ্গে রোপা আমান চাষ করেছে। তুলনামূলক রোগ-বালাই এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে৷ তবে কৃষকদের একটি আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে ধানের দাম।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটা স্তরে যে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে যদি সঙ্গতি রেখে বাজার ব্যবস্থা যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কৃষক যদি যথাযথ মূল্য পায় তাহলে নড়াইলসহ সারা বাংলাদেশে রোপা আমনের আবাদ বাড়বে। একইসঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে কৃষক আরো আগ্রহী হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

(আরএম/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২৩)