ঝর্ণা মল্লিক


নীলোৎপল সাধ্য, একজন নন্দিত, গুণী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী। ১৯৫৫ সালের আজকের দিনে (৬ ডিসেম্বর)  ময়মনসিংহ জেলায় তার জন্ম। পেশায় তিনি  একজন প্রকৌশলী এবং টি.এন্ড.টি বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গান শেখার সুযোগ পান অধ্যাপক নুরুল আনোয়ার, সংস্কৃতিবিদ আলোক নাহা ও সুমিত নাহারের কাছে। 

১৯৮০ সালে জাতীর রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিযোগিতায় গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে ক্রমে তিনি শ্রদ্ধেয় ওয়াহিদুল হকের সবচেয়ে প্রিয় শিষ্যে পরিণত হন । রবীন্দ্রনাথের গানকে যেমন গভীরতা নিয়ে কন্ঠে ধারণ ও উপস্থাপন করেন, তেমনি সারাদেশে কবিগুরু ও পঞ্চকবির গান বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্যতম গুরু ওয়াহিদুল হকের যোগ্য ছায়াসঙ্গী। রবীন্দ্রসংগীত নীলোৎপল সাধ্য'র চর্চার প্রিয় ক্ষেত্র হলেও বাংলা গানের পঞ্চ ভাস্করের গান, পুরনো দিনের বাংলা গান, লোকগানসহ নানা ধারার গানে তাঁর দখল ছিল সমকালের ব্যতিক্রমী এক অর্জন। তিনি পাঁচ'শ বছরের পুরনো প্রাচীন বাংলা গান নিয়মিত চর্চা করতেন। গুরুর প্রয়াণের পর আমৃত্যু নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি এই কাজ করে গেছেন।

ছায়ানট ও রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের শুদ্ধসংগীতের বিস্তার ও প্রসারে যে অঙ্গীকার বহন করে, সে জায়গাটি তিনি পর্যায়ক্রমে নিজের করে নিয়েছেন এবং একসময় কেন্দ্রীর কমিটির প্রশিক্ষণের প্রধান দায়িত্বও পালন করেন। তিনি বিশ্বখ্যাত যেসব প্রথিতযশা সঙ্গীত গুরোর কাছে গান শেখার আরো সুযোগ পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শান্তিনিকেতনের সংগীত সাধক শ্রী শৈলজারঞ্জন মজুমদার, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও ড. বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম রবীন্দ্র শিল্পী ও রবীন্দ্র গবেষক ড. সনজিদা খাতুন।

নীলোৎপল সাধ্যের বেশ কয়েকটি একক এলবাম ও মিশ্র এলবাম প্রকাশ হয়েছে। তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রায় ৩০০ গান নিজেরর কণ্ঠে রেকর্ড করেছেন। প্রায় ৪ দশক ধরে দেশের অনেক জেলা-উপজেলায় ঘুরে ঘুরে ৮২টি জেলায় সহস্রাধিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেছেন। তার প্রাণের রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমিতে সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছায়ানট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ও পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন । সংগীত বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য ও সরকারি সংগীত মহাবিদ্যালয়ের একজন প্রশিক্ষক ও পরীক্ষক ছিলেন। সঙ্গীতগুরু ওয়াহিদুল হকের আনন্দধ্বনিতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একজন প্রশিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে গেছেন।
দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনি জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ এর আজীবন সম্মাননা, শ্রুতি সম্মাননা পদকসহ আরো অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন।

রবীন্দ্র সঙ্গীতের জনপ্রিয় ও গুণী এই কণ্ঠশিল্পী নীলোৎপল সাধ্য ২০২০ সালের ১৭ ই মার্চ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তাঁর শুভ জন্মদিনে প্রয়াত গুণী এই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী নীলোৎপল সাধ্য'র স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেতন করছি।।

লেখক : একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও প্রয়াত নীলোৎপল সাধ্য'র স্ত্রী।