স্পোর্টস ডেস্ক : ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা কিংবা বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ, ক্রিকেটে পাকিস্তান-ভারত অথবা ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ সিরিজে থাকে টানটান উত্তেজনা খেলাপাগল বিশ্ব বুঁদ হয়ে থাকে এসব খেলার দিন, একইভাবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজও। তুলনাটা বেমানান। তারপরও বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে নিজ নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

খেলাপাগল বিশ্ব এ দুটি দেশের খেলার সময় কোনো খোঁজই হয়তো রাখে না। কিন্তু দুটি দেশের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে জনগণের কাছে এর গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। র্যাঙ্কিংয়ের নিচের দিকে থাকা দুটি দেশ নিজেদের উন্নতির জন্য একে অপরকে টার্গেট করে। কখনও বাংলাদেশ সফল হয়, কখনও জিম্বাবুয়ে। টেস্ট পরিবারের সদস্য হওয়ার পর থেকে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তার করলেও ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জেতার পর থেকেই শুরু হয় পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা অব্যাহত আছে এখনও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উত্তেজনার পারদও। অন্য দেশগুলোর বিপক্ষে যখনই খেলতে নামে হারকে মেনে নিয়েই খেলতে নামে এই দুটি দেশ। কিন্তু নিজেদের মোকাবিলায় কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। যেন কেহ কারো নাহি ছাড়ে সমানে সমান। এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা লড়াইয়ের মাঝে এবারের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। বলা যায় দু’দলের জন্য অস্তিত্বের লড়াই। আইসিসির তিন মোড়লের ইচ্ছের কাছে ‘বলি’ হওয়ার পর নতুন নিয়মে র্যাঙ্কিংয়ের নিচে থাকা দলটি সরাসরি টেস্ট খেলার যোগ্যতা হারাবে। আবার টেস্ট পরিবারে ফিরে আসতে হলে ইন্টরাকন্টিনেন্টাল কাপ চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে লড়ে জয়ী হয়ে আসতে হবে। এখানে কে খেলবে তার সমাধান ছিল এই সিরিজ। সে লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই বাংলাদেশ উঠে এসেছে র্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বর থেকে নয় নম্বরে। জিম্বাবুয়ে নেমে গেছে নয় নম্বর থেকে ১০ নম্বরে। বিষয়টি সুখকর হলেও নির্বিঘ্নে ঘুমানোর মতো কিন্তু নয়। এখানে অবস্থান ধরে রাখার বিষয়ও আছে। তিন মোড়লের কেচ্ছার গল্প অনুযায়ী ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে তা ধরে রাখতে হবে। এর মাঝে পতন হলে বাংলাদেশকে আবার উঠে আসার জন্য লড়তে হবে। মজার বিষয় হলে এই দুই দল নিজেদের ছাড়া আর কোন দলকেই হারানোর মতো শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। এবার এগিয়ে যাওয়াতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পায়ের তলার মাটি অনেক শক্ত হয়ে উঠবে। তখন লড়াই করতে হবে ধরে রাখার জন্য, উঠে আসার জন্য নয়। দুই টেস্টে জিম্বাবুয়েকে যেভাবে বাংলাদেশ কুপোকাত করেছে তাতে এই ফারাক ঘুচিয়ে আনা জিম্বাবুয়ের জন্য কঠিনই হবে। বাংলাদেশকে এখন নজর দিতে হবে সিরিজের শেষ টেস্টের দিকে। লক্ষ্য হোয়াইটওয়াশ করা। সফল হলে ক্রিকেটের সাফল্যের পাতায় শুধু নতুন পাতাই যোগ হবে না, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াবে ১৪। ড্র হলে তা নেমে আসবে নয় পয়েন্টে। হেরে গেলে আরও নেমে এসে হবে ৪ পয়েন্টে। তাই শেষ টেস্টও বাংলাদেশের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পয়েন্টের ব্যবধান যাতে ১৪ থাকে তার জন্য মরণ কামড় দেয়া। সফল হলে ঘরের মাটিতে কোন দেশকে হোয়াইটওয়াশ করার প্রথম কীর্তিও গড়বে মুশফিকুর রহীমের দল। আবার তিন ম্যাচের সিরিজ হওয়াতে সেখানেও থাকবে নতুন কীর্তি। এর আগে বাংলাদেশ একবারই মাত্র প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। কিন্তু তা ছিল দেশের বাইরে দুই টেস্টের সিরিজ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেয়েছিল সেই সাফল্য। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বাংলাদেশ দল কি এমন সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইবে?
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু শেষ ম্যাচ খেলোয়াড়দের হালকাভাবে না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জিম্বাবুয়েও ফিরে আসার জন্য শেষ চেষ্টা করবে। স্পিনারদের কল্যাণে বাংলাদেশ জয়ী হলেও পেসারদেরও ভূমিকা রাখতে হবে বলে তিনি মনে করেন। চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে তিনি ধুঁয়াশার মাঝে আছেন। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে উইকেটে যে পরিমাণ ফাটল ছিল সে তুলনায় বোলাররা সুবিধা পাননি বলে জানান। এ রকম ফাটল ধরা উইকেটে অবিশ্বাস্যভাবে ব্যাটসম্যানরাই ফায়দা নিয়েছেন। তিনি বলেন, জিততে হলে স্পিনাররাই ভরসা। কিন্তু কোনো কারণে স্পিনাররা সফল হতে না পারলেও পেসারদের ভূমিকা রাখতে হবে।’ এখানে আবার জিম্বাবুয়ের পেসাররা এগিয়ে আছে বলে তার মত। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বলতে গেলে অধিনায়ক পেসারদের ব্যবহারই করেননি। রুবেল মাত্র চার ওভার বোলিং করেছেন। শাহাদাতকে দিয়ে বোলিংই করাননি। তা’হলে কি তিনি পেসারদের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। উইকেট পেতে হলে সেটা ভিন্ন বিষয়।’ বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিককে এখানে আরও ভালোভাবে কাজ করার প্রয়োজন আছে বলে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।

(ওএস/এইচআর/নভেম্বর ০৯, ২০১৪)