স্টাফ রিপোর্টার : দেশে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ সংক্রান্ত আদালতগুলোর ৯৮ শতাংশ রায় শ্রমিকদের পক্ষে গেলেও তা বাস্তবায়ন করছেন না শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলে জানানো হয়েছে।

আদালতের আদেশ অমান্যকারীদের ৯৫ ভাগই হচ্ছেন গার্মেন্ট কারখানার মালিক। নিরুপায় হয়ে মালিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি (‘অর্ডার ভায়োলেশন) মামলা করেছেন শ্রমিকরা। এরপরও আদালতে হাজির হচ্ছেন না তারা। এ অপরাধে ১৬৫৪ জন মালিকের বিরুদ্ধে ঢাকার তিনটি আদালত জারি করেছেন গ্রেফতারি পরোয়ানা। কিন্তু আদালতের এমন কঠোর আদেশও আমলে নিচ্ছেন না মালিক পক্ষ। আবার রহস্যজনক কারণে ‘নীরব দর্শক’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ- আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পর্যালোচনায় জানা যায়, ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন ৮৯/১৩ ফৌজদারি মামলায় আয়ুব আলী নামের একজন শ্রমিক গার্মেন্ট কারখানায় লেবার পদে কাজ করছিলেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই আয়ুবকে ছাঁটাই করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে তিনি শ্রম আদালতে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় আদালত শ্রমিক আয়ুবকে তার পাওনা ২২ হাজার ৭৫৬ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের আদেশ মানেননি মালিক। পরে আয়ুব ফের ওই মালিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেন। এ মামলায় গত বছরের ১০ অক্টোবর ওই মালিকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া ঢাকার প্রথম শ্রম আদালতে বিচারাধীন ১২৭/১৪ নম্বর মামলার নথি থেকে জানা গেছে, একটি সিরামিকসে রুহুল আমিন নামের ব্যক্তি ১৯৮৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্কিলড টেকনেশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার শ্রমিক নম্বর ছিল ৯৫৭। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৩০ এপ্রিল পদত্যাগ করেন। এর আগেই তিনি ওই প্রতিষ্ঠানটির এইচআর বিভাগকে জানিয়েছিলেন তার অসুস্থতার কথা। পদত্যাগের পর ১ মে প্রতিষ্ঠানটি রুহুলকে শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ডের পাওনাদি পরিশোধ করে। কিন্তু তার পদত্যাগ জনিত গ্রাইচ্যুটি, ছুটি ও লভ্যাংশের মুনাফা দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটির কাছে রুহুল দাবি করেছেন, ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪ টাকা পান। এ মামলাটিতে তারিখের পর তারিখ পড়েই চলেছে।

ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের পেশকার নুরুজ্জামান জানান, তাঁর আদালতে সাতশ’ কলকারখানার মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।’ অপরদিকে ঢাকার প্রথম আদালতের পেশকার শাহ আলম জানান, তার আদালতে তিনশ’র কিছু বেশি মালিকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি রয়েছে।’ এছাড়া বাকি ৬৫৪টি গ্রেফতারি পরোয়ানা ঢাকা দ্বিতীয় শ্রম আদালত থেকে জারি হয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও মালিকদের গ্রেফতার করছেন না সংশ্লিষ্ট পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এ কারণে ঢাকার তিনটি আদালতে গত আট বছর ধরে ৩৯৫৪টি ভায়োলেশন মামলার বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়ে আছে।

(ওএস/এটি/মে ০১, ২০১৪)