প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সাথে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার মানুষদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। এই দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষকে বছরের পর বছর নানা সংকট আর বিড়ন্বনা পোহাতে হয় বছর জুড়ে। কখনো ব্রহ্মপুত্রের বর্ষা মৌসুম কখনা বা শুষ্ক মৌসুম। তাদের এ বিরম্বনা কমাতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে চালু করা হয় ফেরী সার্ভিস। জমকালো আয়োজনে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধূরী এ ফেরী সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।

নৌপথের ২১ কিলোমিটার পথ অনায়াসে পাড়ি দিতে পারবে জেনে আনন্দে উজ্জীবিত ছিলো এই দুই উপজেলার মানুষজন। কিন্তু মাসখানিক না যেতেই আবারও দেখা দিলো পূর্বের বিরম্বনা। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকট, ড্রেজিং না করা, পানি না থাকা,ফেরির ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি নানা কারণে থেমে থেমে বন্ধ হয় ফেরি সার্ভিস।

এই রুটের জন্য নির্ধারিত ‘ফেরি সুফিয়া কামাল’ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বলা হয় ব্রহ্মপুত্র নদের জন্য এটি চলাচল উপযোগী নয়।

পরবর্তীতে ছোট ফেরি কদম দেয়া হয়। যার ধারণ ক্ষমতা একেবারে কম। সেটিও গত দুই মাস ধরে থেমে থেমে চলাচল করছে। কখনো বন্ধ হয় আবার কখনো চালু হয়। বর্তমানে এই রুটে ২টি ফেরি সার্ভিস চালু থাকলেও প্রকৃত পক্ষে কোন কাজে আসছে না সাধারণ যাত্রীদের। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ইঞ্জিন চালিত নৌকা গুলোও। প্রতিদিন মাঝের চরে আটকে যাচ্ছে এসব নৌ-যানগুলো।

অধিকাংশ লোকজনই পায়ে হেঁটে ব্রহ্মপুত্র নদের চর পাড়ি দিচ্ছে। চিলমারী উপজেলার অষ্টমির চর, নয়ারহাট, করাই বরিশাল, চর সহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন এবার ব্রহ্মপুত্র নদে ইরি-বোরো চাষের প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। নদে চর জেগে উঠায় বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক পরিবারের মাছধরা ও নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ। বিশাল নদটিতে চর জেগে পরিণত হয়ে ছোট্ট একটি খালে।

চিলমারীর এই নদটি বর্তমানে নাব্যতা সংকটের কারণে চিলমারী রৌমারী,রাজিবপুর নৌপথে ফেরি চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমে যাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে দুর্ভোগ। ফেরি সীমিত আকারে পরিবহন নিয়ে ধীরগতিতে চলায় ঘাটে পরিবহনের দীর্ঘ সারি বাড়ছে।

গত দুইদিন ধরে ফেরি ঘাটে আটকে থাকা ট্রাক চালক উজ্জ্বল মিয়া বলেন,’বুড়িমারী থেকে জামাল পুরের উদ্দেশ্যে পাথর নিয়ে যাচ্ছি । নদে চাহিদা মাফিক ড্রেজিং না করায় ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। আইজ ২দিন থাকি এখানে বসে আছি।’

চিলমারী নৌ বন্দরের নৌকার মাঝি মো.কামরুল ইসলাম বলেন,শুকনা নদী,শোগ(সব) জাগাত চর পরি গেইছে। অনেক দুর ঘুরি ঘুরি যাওয়া নাগে।সময় ও তেল খরচ বেশি হয়। নৌকাত যাত্রী দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইঞ্জিন নৌকা প্রায় সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ফেরি দিয়ে নিয়মিত পারাপার হওয়া যাত্রী সুমন মিয়া বলেন,’গতকাল ফেরি খুব আস্তে গেছে,গত মাসে ৩-৪ বার ফেরি চলাচল বন্ধ ছিলো।

এখনো মাঝে-মধ্যে ফেরি বন্ধ থাকে ,বলে নাব্যতা সংকট। এতে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের খুব অসুবিধা হয়েছে।’

আরেক যাত্রী সানজিদা খাতুন বলেন,’আমি কুড়িগ্রাম শহরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আমাকে সপ্তাহে এক-দুইবার এ পথ দিয়ে চলতে হয়। ব্রহ্মপুত্রের রৌমারীর রুটটি ড্রেজিং হলে আমাদের ৭-৮ কিলোমিটারের পথ কমে আসবে আমাদের সময়ও তখন কম লাগবে,কিন্তু নাব্যতার কারনে ফেরি সার্ভিস যেভাবে চলছে এর থেকে ছোট নৌকায় পাড়ি দেয়া খুব সহজ।’

স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াদুল ইসলাম বলেন,’ব্রহ্মপুত্র নদের সংস্কার না হলে বর্ষা মৌসুমে চরম হুমকির শিকার হবে উপজেলার চরাঞ্চলের এসব গ্রামগঞ্জ । নাব্যতা হারিয়ে বেকার হয়ে যাবে নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবন যুদ্ধ করা নৌকার মাঝির প্রায় দুই হাজার পরিবার। ফেরি সার্ভিসটিও হয়তো একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।’

সংগঠক ও লেখক নাহিদ হাসান নলেজ বলেন,’পূর্বের সুফিয়া কামাল নামের ফেরিটি বেশ বড় ছিলো। অনেক যানবাহন ও মানুষ পারাপার হতো। গত দুই মাস থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে নতুন ছোট্ট এই ফেরিটি। আমরা দ্রুত নদের ড্রেজিং করে ফেরি সার্ভিসের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক সুপার ভাইজার মিজানুর রহমান বলেন,’নদে পানি না থাকায় ফেরি চলাচলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই ধারণ ক্ষমতার তুলনায় কম যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এতে যাহনবাহনের চাপ বাড়ছে। আর যেখানে ফেরি আটকে যাচ্ছে সেখানে আমরা খনন করছি।’

(পিএমএস/এএস/ডিসেম্বর ২২, ২০২৩)