একে আজাদ : রাজবাড়ীর কালুখালী-পাংশা সড়কে দুটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেতু দুটি অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি রয়েছে।

কালুখালী উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ঝাউগ্রাম এলাকায় প্রায় ৪০০ মিটারের মধ্যে দুটি ব্রিজের নির্মাণ কাজ মেয়াদ শেষের চার মাস পরেও শেষ হয়নি। এতে কালুখালী ও পাংশা উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কালুখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের (ডিডিআইআরডব্লিউএসপি) আওতায় রাজবাড়ীর কালুখালী-পাংশা সড়কে দুটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্রিজ নির্মাণের কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমীন। কাজের অংশীদার রাজবাড়ীর বড়পুল এলাকার ঠিকাদার ওমর ফারুক। ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করা হয়। চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই কাজ এখনো শেষ হয়নি। ব্রিজ দুটির অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি রয়েছে।

এলজিইডি কালুখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ব্রিজ দুটি নির্মাণের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১২ মিটার ও প্রস্থ ৯ দশমিক ৭ মিটার। এই ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অপর ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার ও প্রস্থ ৯ দশমিক ৭ মিটার। ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৭ টাকা।

স্থানীয় লোকজন বলেন, কালুখালী ও পাংশা উপজেলায় মানুষের যাতায়াতের জন্য কালুখালী-পাংশা সড়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন দুই উপজেলার হাজার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। প্রায় দুই বছর আগে ব্রিজ দুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু শুরু হওয়ার পর একটানা ব্রিজ দুটির কাজ চলে। কয়েক দিন কাজ হয়। এরপর আবার কাজ বন্ধ থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালুখালী-পাংশা সড়কের ৪০০ মিটারের মধ্যে দুটি ব্রিজ । প্রথম ব্রিজের সাইনবোর্ডটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ব্রিজ পাশে একটি সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। রাস্তার পাশে শ্রমিকদের থাকার ঘর। নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশের বিকল্প রাস্তা দিয়ে মানুষ ও মালামাল নিয়ে বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াত করছে। কিছু দূর এগোলে আরেকটি ব্রিজ । ব্রিজ জন্য তৈরি রডের খাঁচা পড়ে রয়েছে। রাস্তার উপর শ্রমিকদের থাকার ঘর।

ভ্যান চালক রহিম বলেন, আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে ভ্যানগাড়ী চালাই এই দুইটি ব্রিজের বিকল্প রাস্তা পার হতেই অনেক সমস্যায় পরতে হয়। ভ্যানের ও অনেক ক্ষতি হয়। অনেকে আবার পরে ও যায়। ব্রিজের কাজ শেষ করার নাম নাই। অনেক যাত্রীর এখানের পড়ে অসুস্থ হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে শোনা যায় একজন মহিলার মাজা ভেগে গেছে।

স্থানীয়রা আরো বলেন এই কাজ গত দুই তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। আরেকটি কাজ অন্তত মাস খানেক বন্ধ রয়েছে। আমাদের এলাকা কৃষি প্রধান হওয়ায় আমাদের বাজারে কৃষি পণ্য নেওয়ায় খুব সমস্যা হয়।

ব্রিজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা কালুখালী এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী আকবর আলী বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের জন্য একটি রানিং বিল (চলতি বিল) চেয়ে ছিল। বিলটি জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় বিল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে আপাতত বিজের কাজ বন্ধ আছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাঝেমধ্যে কাজ বন্ধ ছিল। তবে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।’

ঠিকাদারি কাজের অংশীদার ওমর ফারুক বলেন, ‘একটি ব্রিজের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়ে গেছে। আরেকটি ব্রিজের বেজের (ভিত্তির) কাজ চলছে। বৃষ্টির পরে ব্রিজের নিচে পানি জমে যায়। এ কারণে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর কাজের জন্য ৭৭ লাখ টাকার একটি বিল জমা দিয়েছি। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় কোনো বিল এখনো পাইনি। সব মিলিয়ে কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা কাজের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর আবেদন করেছি। এই সময়ের মধ্যে একটি সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারব। তবে আরেকটি সেতু নির্মাণ শেষ হতে আরও সময় লাগবে।’

ব্রিজ দুটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক রুহুল আমীন বলেন, ‘ব্রিজের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি আমি জানি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই আবার ব্রিজের কাজ শুরু হবে।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩)