রিয়াজুল রিয়াজ


যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সদানন্দ ধুমে লিখেছেন, বিএনপির নির্বাচন বর্জনের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতা হিসেবে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার বিজয় প্রেসিডেন্ট বাইডেনেরও পরাজয়, যিনি গণতন্ত্রকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার প্রচেষ্টায় ছিলেন বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে।

৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা, যিনি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নির্বাচিত যেকোনো নারী নেত্রীর চেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন। তিনি মৌলবাদী শক্তিকে দমন করেছেন এবং তার দেশকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছেন- যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের নেতারা দেখাতে পারেননি।

লেখক নিবন্ধটিতে আরও উল্লেখ করেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাইডেনের প্রশাসনের তুলনা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউস মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধীদলগুলোকে গণগ্রেপ্তারের দায়ে শেখ হাসিনার সরকারকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু শেখ হাসিনা এসব প্রচেষ্টায় বেঁকে বসেছেন।

নিবন্ধটিতে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার যদি ত্রুটিও থাকে তা সত্ত্বেও বিকল্প আরও তিক্ত। সর্বশেষ বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং যারা ভারতকে টার্গেট করেছিল সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অবর্ণনীয় নৃশংসতার জন্য দায়ী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে জোটবদ্ধ ছিল। ভারতীয়রা আরেকটি বিএনপি সরকারের ওপর ঝুঁকি নিতে রাজি নয়।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা স্পষ্ট, কারণ তাত্ত্বিকভাবে দেশটি বাইডেনের মূল্যবোধ-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি আদর্শ পরীক্ষার ক্ষেত্র ছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শেকড় গভীরে। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ নির্বাচনের পাশাপাশি একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং মুক্ত গণমাধ্যমের মতো উদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশের অনেক নেতৃস্থানীয় সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী পাশ্চাত্যে শিক্ষিত ছিলেন।

হোয়াইট হাউসের জানা উচিত ছিল, তাদের বোঝা উচিত ছিল, আওয়ামী লীগ এমন একটা দল যারা ইসলামাবাদের সঙ্গে মার্কিন সমর্থন থাকার পরেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছিল। রাশিয়া, চীন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভারতসহ সমর্থকদের একটি অপ্রত্যাশিত জোট গঠনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে মার্কিন চাপ মোকাবিলা করেছেন, যেখানে তাকে একটি অস্থিতিশীল দেশে স্থিতিশীলতার রক্ষাকবচ হিসাবে দেখা হয়। বাংলাদেশের মানুষ হোয়াইট হাউসের পরিবর্তে শেখ হাসিনার ওপর বেশি ভরসা করে।

লেখকের দাবি, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি হাই-প্রোফাইল ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’ থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিলেও অনেক খারাপ রেকর্ড রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত বছর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচনকে ‘দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত’ হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলেছিল।

লেখক : সাংবাদিক।

(সদানন্দ ধুমে'র লেখা ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত বাইডেনের ‘ডেমোক্রেসি প্রমোশন’ -এর 'সীমাবদ্ধতা' দেখিয়েছে 'বাংলাদেশ' শিরোনামের নিবন্ধ অবলম্বনে লেখা)