রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের লক্ষ্যে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে দীণেশ কর্মকারের জমিতে থাকা বধ্যভূমি পরিদর্শন করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব মোঃ আফরাজুর রহমান। 

সাতক্ষীরা বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কলেজ অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার বলেন, ২০১০ সাল থেকে দীণেশ কর্মকারের জমিতে থাকা বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য তারা ওইস্থানে প্রতিবছর শহীদদের স্মৃতিচারণামূলক আলোচনা সভার পাশাপাশি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে আসছেন। ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করার অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি বধ্যভূমি সরেজমিনে পরিদর্শণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচীব মোঃ আফরাজুর রহমান। সে কারণে ২০২২ সালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীরের পাঠানো প্রস্তাবনা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহরের দীণেশ কর্মকারের জমিতে থাকা বধ্যভূমি দেখতে এসেছেন মোঃ আফরাজুর রহমান।

বধ্যভূমি পরিদর্শণকালে সাতক্ষীরা বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, সাংবাদিক কল্যাণ ব্যাণার্জী, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, আবু বক্কর ছিদ্দিক, শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মকবুল হোসেন, আব্দুস সবুরসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল ভারতে যাওয়ার সময় বৃষ্টির কারণে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া চার শতাধিক শরনাথীকে পাকিস্তান সেনা, আল বদর ও রাজাকাররা কিভাবে তাদেরকে বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে লাশ পুকুরের পাশে মাটিতে চাপা দেয় তার বর্ণনা করেন।

এ সময় নারীদের নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন তারা। স্বাধীনতা পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ করে গত ১৫ বছর যাবৎ একটানা ক্ষমতায় থাকার পরও দীণেশ কর্মকারের জমিতে থাকা বধ্যভূমি, ঝাউডাঙা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে থাকা বধ্যভূমি, বাকাল, মাহমুদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ ও সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। সাতক্ষীরা সদর আসেন ১০ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার ভূমিকা ছিলো রহস্যজনক। তার ভূমিকার কারণে দীণেশ কর্মকারের জমিতে থাকা বধ্যভূমির জায়গা অনিয়মের মাধ্যমে দখল করে মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল করিম বহুতল ভবন বানিয়েছেন। ওই জায়গা দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। তাই বধ্যভূমির নিদ্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করে প্রয়োজনে জিল্লুল করিমসহ অন্যদের দখলে থাকা জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে দ্রুত স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে হবে। জিল্লুল করিম কিভাবে দীণেশ কর্মকারের ফেলে রেখে যাওয়া সম্পত্তির মালিক হলেন তা যাঁচাই করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচীব মোঃ আফরাজুর রহমান বলেন, আইনগত জটিলতা কাটিয়ে জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রস্তাবনা অনুযায়ি দীণেশ কর্মকারের জমিতে থাকা বধ্যভূমি, কালিগঞ্জের মহৎপুর ও তালা উপজেলার জালালপুরের বধ্যভূমি সংরক্ষন করে সেখানে খুবশ্রীঘ্র স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করনা হবে।

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুঁইয়া।

এর আগে মোঃ আফরাজুর রহমান বৃহষ্পতিবার কালিগঞ্জের মহৎপুর ও তালা উপজেলার জালালপুরের বধ্যভূমি পরিদর্শণ করেন।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২৪)